হেক্সা জয়ের মিশন নিয়ে কাতার পা রেখেছিল ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিল। কিন্তু তাদের যাত্রা থেমেছে কোয়ার্টার ফাইনালে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। ক্রোয়াট গোলরক্ষক একাই যেন হারিয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলকে। ১২০ মিনিট ধরে নেইমারদের একের পর এক শট পাহাড়ের মতো আটকে দিলেন ডোমিনিক লিভাকোভিচ। শেষে টাইব্রেকারে প্রথম শট বাঁচিয়ে ব্রাজিলকে হারান ক্রোয়েশিয়ার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষক।
প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার গোল লক্ষ্য করে পাঁচটি শট মেরেছিল ব্রাজিল। কোনও শট থেকেই গোল হয়নি। বারবার নিজের শরীর ব্যবহার করে সেই সব বল আটকে দিয়েছেন লিভাকোভিচ। ব্রাজিলের ফুটবলারদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, গোল করতে না পেরে কতটা হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। কখনও ডান পায়ে, কখনও হাতে, কখনও বা বুকে। একের পর এক বল আটকিয়েছেন লিভাকোভিচ। দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই ছবি। চারটি গোল করতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু একটিও হয়নি।
অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার গোল লক্ষ্য করে আরও পাঁচটি শট মারে ব্রাজিল। তার মধ্যে নেইমারের গোল ছাড়া বাকি চারটি শটও বাঁচিয়ে দেন তিনি। তাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলেছিল দলটি।
টাইব্রেকারেও প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন অনেকের মতেই বিশ্বের সেরা গোলকিপার অ্যালিসন, কিন্তু তাকেও টেক্কা দিয়ে যেভাবে জয় এনে দিলেন ক্রোয়েশিয়াকে, তাতে পৃথিবী এবং ক্রোয়েশিয়া যতদিন থাকবে, লিভাকোভিচের নাম উচ্চারিত হবে ততদিন।
উচ্চশিক্ষিত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন লিভাকোভিচ। তার বাবা দ্রাভকো লিভাকোভিচ একজন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার। ক্রোয়েশিয়ার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাবেক স্টেট সেক্রেটারি। ডমিনিক লিভাকোভিচের দাদা ছিলেন রেডিওলজিস্ট। দাদী ইংরেজি শিক্ষক। কিন্তু ফুটবলের প্রতি আগ্রহ থাকায় লিভাকোভিচ ২০০৭ সালে যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব জাদারে। সেখান থেকে তিনি যান জাগরেবে।
২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার সেরা ক্লাব দিনামো জাগরেবে যোগ দেন লিভাকোভিচ। মাঝে ২০১০ সালে ক্রোয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৫ দলে অভিষেক হয় তার। এরপর বয়সভিত্তিক সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন লিভাকোভিচ। জাতীয় দলে অভিষেক ২০১৭ সালে চায়না কাপে চিলির বিপক্ষে। ম্যাচটিতে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে গিয়েছিল তার দল।
২০১৮ বিশ্বকাপের পর সুবাসিচ অবসরে চলে যাওয়ায় নতুন গোলরক্ষক হিসেবে কোচ দালিচ বেছে নেন লভরে কালিনিচকে। কিন্তু একের পর এক বাজে পারফরম্যান্স করে বাদ পড়েন কালিনিচ। দরজা খুলে যায় লিভাকোভিচের। ২০২০ ইউরো বাছাইপর্বে ক্রোয়েশিয়ার নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক হিসেবে খেলেন তিনি। সেই থেকে দলের গোলপোস্ট সামলানোর কাজটা লিভাকোভিচই করে যাচ্ছেন। গতকাল টাইব্রেকারে তিনটি পেনাল্টি ঠেকানো ছাড়াও ১২০ মিনিটের ম্যাচে তিনটি সেভ করেন লিভাকোভিচ।
জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৯ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে দলের সঙ্গী ছিলেন এই গোলরক্ষক। কিন্তু খেলতে পারেননি এক ম্যাচও। এবার সুযোগ পেয়েই যেন বাজিমাত করছেন। জাপানের বিপক্ষেও টাইব্রেকারে তিন শট ফিরিয়ে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে টাইব্রেকারে গড়ানো কোনো ম্যাচে তিনটি শট ঠেকিয়ে দেওয়া মাত্র তৃতীয় গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। আর ক্রোয়েশিয়ানদের মধ্যে দ্বিতীয়। গত আসরের শেষ ষোলোতে ডেনমার্কের তিনটি শট ঠেকান ড্যানিয়েল সুবাসিচ। আর ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়েন পর্তুগালের গোলরক্ষক রিকার্ডো।