টানা দুই হারে ফাইনালে যেতে না পারার শঙ্কাটা প্রবলই ছিল। তবে কাগজে কলমে একটা সম্ভাবনা টিকে ছিল বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ রানের বিশাল হারে সেই সম্ভাবনাটাও শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তাসমান সাগরপাড়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দলের।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) টসে জেতে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ডকে। তবে তার এই সিদ্ধান্ত যে মোটেও ঠিক ছিল না, স্বাগতিকরা যেন প্রমাণ করে চলেছে সেটাই। ইনিংসের শুরু থেকে চড়াও হয়েছিল বাংলাদেশের ওপর। পঞ্চম ওভারে শরিফুল ইসলাম ফিন অ্যালেনকে বিদায় করলেও পাওয়ারপ্লেতে দলটি তুলে ফেলে ৫৪ রান। নিউজিল্যান্ডের বড় রানের সোপানটা গড়া হয়ে যায় তখনই।
মাঝের ওভারেও নিউজিল্যান্ডের রান রেট কমেনি একটু। দশ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ৮৭। পরের ওভারে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ডেভন কনওয়ের জুটিটা গিয়ে থামে ইনিংসের ১৪তম ওভারে। গাপটিলকে ফেরান এবাদত হোসেন।
এরপর ফিফটি করেন কনওয়ে। তাকে সাইফউদ্দিন ফেরান ইনিংসের ১৭তম ওভারের প্রথম বলে। দুই বলের বিরতিতে মার্ক চ্যাপম্যানকেও ফেরান তিনি। তাতে ১৬৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তাতে অবশ্য রান পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কা একটুও কমেনি বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের বিশাল রানের সংগ্রহটা এরপর নিশ্চিত করেন গ্লেন ফিলিপস। ২৪ বলে তিনি খেলেন ৬০ রানের ইনিংস। তাতেই নিউজিল্যান্ড ২০ ওভার শেষে তুলে ফেলে ২০৮ রান।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামলে শুরুটা ভালো হতে হয়। তবে সফরকারীরা সে ভালো শুরুটা পায়নি। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। দু’বার ‘জীবন’ পেয়েও ঠিক কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগটা। ১১ বলে ১২ রান করে ফিরেছেন তিনি।
বাজে শুরুর পর নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ফিরছেন, বাংলাদেশের রান তখনো পড়ে আছে ২৪-এ, ওভার চলে গেছে ৩.৩টি। এরপর সৌম্য সরকারকে সঙ্গী হিসেবে পান ওপেনার লিটন। মিলনের সেই ওভারে একটা চার মারেন তিনি।
টিম সাউদির করা এরপরের ওভারে একটা ছক্কা হাঁকান তিনি। তাতে দারুণ কিছুর আভাসও দিচ্ছিলেন বৈকি! পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে তিনি বিদায় নেন মাইকেল ব্রেসওয়েলকে লং অনের ওপর দিয়ে সীমানাছাড়া করতে গিয়ে। ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ।
এরপর সাকিব আল হাসানকে সঙ্গী হিসেবে পান সৌম্য। শুরুটা ভালো ছিল না তার। ১০ বল পর্যন্ত ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। এরপরই তিনি হাত খুলতে শুরু করেন। মাইকেল ব্রেসওয়েলের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে হাঁকান দুটো চার, ইশ সোধির পরের ওভারে আরও একটা।
তবে অ্যাডাম মিলনের করা ইনিংসের ১০ম ওভারে ছন্দপতন ঘটে তার। তিনিও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন লিটনের মতোই হাফ-হার্টেড এক শটে, ক্যাচ দেন লং অনে। ১০ ওভার শেষে ৯০ রান তুলে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পরের লড়াইটা সাকিব একাই লড়েছেন। ওপাশে সঙ্গীদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখেছেন। তার মধ্যেই তুলে নিয়েছেন নিজের ফিফটি। সৌম্য যখন বিদায় নিচ্ছেন, সাকিবের রান তখন ১৫ বলে ২৬ আর দলের রান ছিল ১০ ওভার শেষে ৯০। ১৯তম ওভারে যখন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফিরছেন, তখন তার রান ৪৪ বলে ৭০, আর দলের রান মোটে ১৫৩। যার মানে দাঁড়াচ্ছে পরের ৮.২ ওভারে সাকিব খেলেছেন ২৯ বল, রান তুলেছেন ৪৬। আর বাকিরা ২১ বল খেলে তুলেছেন ১৭ রান। শেষ পাঁচ ব্যাটার মিলে ৩১ বল খেলে তুলেছেন ২৪ রান। সাকিবের নিঃসঙ্গ লড়াইটা পরিষ্কার হয়ে গেছে এখানেই। বাংলাদেশও ম্যাচটা হেরেছে অবধারিতভাবে। ৪৮ রানের এই হারে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকেও বিদায় নিল সাকিবের দল।