বিয়ানীবাজারে বেড়েছে আত্মহনন, দুই মাসে ৬ লাশ উদ্ধার

বিয়ানীবাজার উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়েছে আত্মহননের প্রবনতা। আত্মহননকারীদের সকলেই তরুণ-তরুনী। গত দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছয় তরুণ-তরুণী বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। হঠাৎ করে তরুণদের আত্মহননের এমন প্রবনতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুধী মহল। কি কারণে অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৭ বছর বয়সী জাবের আহমদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত দুই মাসে ছয় তরুণ-তরুণী আত্মহত্যা করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের জলঢুপ বড়গ্রাম এলাকার জাবের আহমদ (১৭) নামের তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে বড়গ্রামের সড়কের পাশে বাঁশ বাগানের একটি বাঁশের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এদিকে, গত ১৩ আগস্ট দুবাগ ইউনিয়নের মইয়াখালি গ্রামের ইকবাল হোসেনের পুত্র ইমন আহমদ (১৩) নানাবাড়ি উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের নয়াগ্রামে বেড়াতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এর আগে ৯ আগস্ট মাথিউরা ইউনিয়নের দুধবকশী গ্রামের মৃত বেলাল আহমদের পুত্র আদনান হোসেন (২৩) কে নিজ কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার খাসাড়িপাড়া এলাকায় খালার বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় হাজেরা বেগম (১৯) নামের কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২৭ জুলাই সকালে পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় এ কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে।

পৌরশহরের রাজমহল এক্সপ্রেসের কর্মচারী মোহাম্মদ আলীর (১৮) লাশ শহরের নয়াগ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুলাই ভাড়া বাসার দরজা ভেঙ্গে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। মোহাম্মদ আলীর বাড়ি বড়লেখা উপজেলার ইটাউরি গ্রামে।

গত ১২ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নোমান আহমদের পুত্র আহমদ আল আবী (১৪) এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিজ ঘরের চৌকাটের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগা লাশ উদ্ধার করা হয়।

হঠাৎ করে বিয়ানীবাজারের তরুণদের আত্মহননের প্রবনতা বেড়ে যাওয়ায় ভাবাচ্ছে সুধী মহলে। শিক্ষাবিদ মজির উদ্দিন আনছার বলেন, তরুণরা কেন আত্মহত্যার পথ বেচে নিচ্ছে এর কারণ উৎঘাটন করতে হবে। তারা কি বেশি আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপন করতে শুরু করায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না এর সাথে সামাজিক-পারিবারিক উদাসীনতার সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে সেটি যাচাই করা প্রয়োজন।

বিয়ানীবাজার স্যোসাল অর্গানাইজেশনের সভাপতি শাহাব উদ্দিন মৌলা বলেন, তরুণরা আত্মহত্যা করছে, এর নেতিবাচক প্রভাব তার সহপাঠীদের উপর পড়ছে। কেন অপরিপক্ষ এসব তরুণরা আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করছে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে।

বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদি হাসান বলেন, গত ১২ জুন এবং এর পরে যেসব তরুণ আত্মহত্যা করেছেন তাদের কারোই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হাতে আসেনি। তবে লাশ উদ্ধার এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া সময় প্রত্যেকটি মরদেহকে আমরা প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা ধারণা করছি।