বিশ্ববাজারে দাম কমছে, জ্বালানি তেল কিনছে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসছে। আর কম দামের তেল দেশে এলে তখন দাম কমাবে সরকার; এমনটাই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ানোর দুই দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এও বলেছেন, সরকার কম দামের তেল কেনা শুরু করেছে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রোববার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে এখন দাম কমে আসছে, সব জায়গায় কমা শুরু হয়েছে। আমরাও কম দামে কেনা শুরু করেছি। এগুলো যখন দেশে এসে পৌঁছাবে, তখন আমাদের চাপ থাকবে না।’

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।

জ্বালানি তেলের এত বেশি হারে দাম এর আগে কখনও বাড়েনি দেশে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ মানুষ এর সমালোচনা করছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির সমস্যায় থাকা দেশে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়বে বলে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহনে বর্ধিত খরচের বিষয়টি আছে।

এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার যতটা ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে।

সমালোচকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম অনেকটাই বাড়লেও সম্প্রতি তা কমে আসছে। এই অবস্থায় সরকার আরেকটু অপেক্ষা করতে পারত।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১৭০ ডলার পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। এখন তা ১৩০ থেকে ডলারের মধ্যে। আর অশোধিত তেল একপর্যায়ে ১৪০ ডলার হয়ে গেলেও এখন তা ৯০ ডলারের ঘরে থিতু হয়েছে।

এমন বাস্তবতায় বিশ্ববাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দরের বিষয়টি সরকার একক বিবেচনায় ঠিক করে। তবে অনেক দেশ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব করে। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশে বাড়ায়, বিশ্ববাজারে কমলে দেশে কমায়।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে তেলের দাম একবার কমানোর পর পরিবহন ভাড়া কমেনি। পরে বিশ্ববাজারে দামের পতন হলেও দাম আর কমায়নি সরকার।

তবে এবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম কমে এলে দেশেও দাম কমবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করেই এই ঘোষণা দিয়েছেন।

তেলের দাম ঠিক করতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করা হবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারব না। তবে আমরা এলপিজি গ্যাসের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করছি। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও আস্তে আস্তে চালু হবে।’

হঠাৎ এত বেশি হারে মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশপাশের দেশগুলোর কী অবস্থা? এখানে যে দাম বাড়ানো হয়েছে লজিক ছাড়া তো বাড়ানো হয়নি। বারবার বলছি, যখন দাম বাড়ে আমাদের জনগণের প্রতি লক্ষ্য থাকে- তা হলো কতটুকু বাড়বে, কতটুকু সহ্য করতে পারবে।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে মানুষের কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভালোর জন্য মাঝে মাঝে কষ্ট করতে হয়।’

রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জোর দেন অনুষ্ঠানের বিষয় বন্ডের ওপর। তিনি বলেন, ‘কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর সেবা প্রদান এবং সরকারি রাজস্বের সুরুক্ষা নিশ্চিত করতে বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন কাজ করবে।’

২০১৭ সালে প্রকল্পটি নেয়া হয়। ২০২৩ সালে কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও সময় হ্রাস পাবে এবং সেবা প্রদানের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় তার সমপরিমাণ রাজস্ব মামলায় আটকে আছে। অটোমেশন শেষ হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে জানান তিনি।