সিলেটের বিশ্বনাথে একই সময়ে একশ গজের মধ্যে আয়োজিত ‘পৌরসভার মেয়র ও মহিলা কাউন্সিলর’ পক্ষের পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ সভা শুরুর পূর্বেই দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে পাল্টাপাল্টি ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পথচারী নারী সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাংচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও দোকানপাট।
ঘটনার সময় বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কে প্রায় আধা ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় মেয়র মুহিবুর রহমানের পক্ষের আহত ইংরেজ আলী, সমুজ আলী, আনোয়ার আলী সহ বেশ কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মেয়র-কাউন্সিলরদের দ্বন্দ্বে বিশ্বনাথজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের উপর মারধর, শ্লীলতাহানী ও মেয়রের নির্দেশে গাড়ি দিয়ে প্রাণে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগমের মামলা দায়েরের প্রতিবাদে পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায় মেয়রের বাসার সামনে বিকেল ৩টার দিকে প্রতিবাদ সভা আহবান করেন মেয়র পক্ষের লোকজন।
অন্যদিকে একই সময়ে প্রায় একশো গজের মধ্যে পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গ্রেপ্তার ও অপসারণের দাবীতে প্রতিবাদ সভা আহবান করে পৌর আওয়ামী লীগ।
পৃথক সভা শুরুর পূর্বেই উভয় পক্ষের পক্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এসময় মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ইট-পাটকেল নিক্ষেপের সময় কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও দোকানপাঠ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক আব্দুল জলিল জালাল বলেন, পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গ্রেপ্তার ও অপসারণের দাবীতে অনুষ্ঠিত পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় মেয়র মুহিবুর রহমানের বাসা থেকে তার (মুহিব) পক্ষের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তা প্রতিহত করেছি।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের সাথে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ঘটনায় বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে পৌরসভার ‘দক্ষিণ মিরেরচর কমিউনিটি ক্লিনিক’ এলাকায় হামলার শিকার হন পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম। ওই রাতেই এদিকে পৌরসভার নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে পৌর এলাকায় সর্বস্তরের নাগরিকের ব্যানারে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এর পরদিন বুধবার (২৪ এপ্রিল) ‘মারধর, শ্লীলতাহানী ও মেয়রের নির্দেশে গাড়ি দিয়ে প্রাণে হত্যা’র চেষ্টার অভিযোগে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বারাম উদ্দিন সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ এবং আরোও ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯’ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ভারসাম্যহীনভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, কাউন্সিলর ও জনগণের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন ও গালিগালাজ, স্বজনপ্রীতি, ময়লা-আবর্জনার পরিস্কার করা সহ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব দেন পৌরসভার দুই প্যানেল মেয়রসহ ৭ কাউন্সিলর।