সিলেটের বিশ্বনাথে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের অনিয়ম, কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে পৌর শহরের একটি সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন কাউন্সিলররা। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, প্যানেল মেয়র-১ ও ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিক হাসান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি ১৭টি পয়েন্ট উল্লেখ্ করে বলেন, ‘পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্বনাথে্র জনগণের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বজনপ্রীতি, গালিগালাজ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্ম অবলীলায় করে যাচ্ছেন। তার এসব অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ পৌরসভার কাউন্সিলররা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক অনাস্থা প্রস্থাব গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর সচিব বরাবর স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রদান করেছি।‘
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘পৌর সভার ময়লা-আবর্জনা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র প্রবাসী চত্বরের পাশে ও বাসিয়া নদীতে ডাম্পিং করা হছে। পৌরসভার টাকা অন্য ইউনিয়ন ও উপজেলায় বিতরণ করছেন তিনি। সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বাজেট অনুসরণ না করে বিভিন্ন নামে-বেনামে ভূয়া বিল ভাউচার করেও বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করছেন। পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া জনপ্রতি ২/৩ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে একক ক্ষমতা বলে মাস্টাররুলে নিজের আত্মীয় -স্বজনকে পৌরসভায় নিয়োগ দিয়েছেন। পৌর শহরের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন সময় দরপত্র আহ্বান ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ পরিচালনা করছেন। কাউন্সিলরদের প্রত্যয়ন ছাড়া লাখ লাখ টাকার বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। দুর্নীতির সুবিধার্থে পৌরসভার কার্যালয় থেকে দাপ্তরিক কাগজপত্র, ফার্নিচার ও ল্যাপটপ তার বাসভবনে নিয়ে অফিসের সকল স্টাফ দিয়ে অফিসের কাজ করান। প্রত্যেক মাসের সাধারণ সভা পৌর কার্যালয় অফিসে না করে তার বাসভবনে করেন। এতে জনগণ সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলর ও জনগণের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বজনপ্রীতি, গালমন্দ ও ক্ষমতার অপব্যবহার ভারসাম্যহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অনিয়ম দুর্নীতি আর ভারসাম্যহীন আচরণের কারণে কাউন্সিলর ও এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া বিচার সালিশের ভিডিও করে তার ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল করে জনগণের মানহানী করে আসছেন।‘
পৌর মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এনে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক অনাস্থা এনে একটি লিখিত প্রস্তাব দাখিল করেছেন পৌরসভার ৭ জন কাউন্সিলর। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে তারা এই অনাস্থা প্রস্তাবের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সংরক্ষিত কাউন্সিলর সাবিনা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রাসনা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর লাকী বেগম, কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, জহুর আলী ও শামীম আহমদ।
এরআগে সোমবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও এই অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন তারা। এদিকে, গত ৯ এপ্রিল দুপুরে পৌর কাউন্সিলররা এক সভার মাধ্যমে এই অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংরক্ষিত ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম, ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিন, ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকি বেগম, ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ। সাময়িক অসুবিধার কারণে ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক উপস্থিত না হলেও লিখিত কাগজে তার স্বাক্ষরসহ সমর্থন রয়েছে।