সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে উপজেলার একমাত্র ইজারাকৃত বিলে অবাধে চলছে মাছ শিকার। ইজারাদারদের পাশ কাটিয়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু ছদ্মবেশে অবৈধভাবে তাদের লোক দিয়ে মাছ শিকার করছে। মাছ শিকার ও ইজারাকৃত বিল নিয়ে নানা সময় মারামারি হয়েছে ও মামলা-মোকদ্দমা চলছে।
জানা গেছে, উপজেলার ১০১ নম্বর জেএলস্থিত দশঘর মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৪২১ নম্বর দাগে ৩৫.৯৫ একর, ১৪৬৬ দাগে ৩.২৯ একর, ১৫৬৯ দাগে ৫.১৮ একর, ১৪৬৭ দাগে ৭১.৩৫ একর, ৯৯ জেএলস্থিত দৌলতপুর মৌজার ১ নম্বর খাস ১ নম্বর খতিয়ানে ৮.৬০ একর, ৩ দাগে ১৫৫৮ একর ও ৫৯ জেএল মৌলভীরগাঁও মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ৪৫৫৪/৫৭২১ নম্বর দাগে ২৮.০০ একর, ৪৭১৩ নম্বর দাগে ৫.৯০ একর, ৪৬১৩ দাগে ৩.৬৫ একর, ৪৬১৪ দাগে ০২.২৯ একর, ৪৬৯২/৪৭১২ নম্বর দাগে ০.৫৮ একর, ৪৪৪৮ সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ এর ৭ অনুচ্ছেদে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশে আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় গত ৯.১০.২০১৭ তারিখে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারামূল্য পরিশোধ করা হলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্র অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে সরকারি কর ও ট্যাক্স পরিশোধ করে যাচ্ছে দশঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
সরেজমিনে ইজারাকৃত বিলে গেলে অবৈধভাবে মাছ শিকার প্রসঙ্গে কথা হয় জেলে আমির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে মাছ মারতাম। একসময় কামাল তারা আমরার জাল উঠাইয়া নেইন। তারপরে তারারে বুঝাইয়া আমরা আবারও জাল দিয়া মাছ শিকার করছি।’ ইজারাদার কারা জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানান।
কথা হয় আরেক মাছ শিকারি আব্দুল আজিজের সাথে। তিনি বলেন, ‘সকলে মাছ মারের দেইক্কা আমরাও মাছ মাররাম। যদি কেউ বাধা দেয় তে আমরা যাইমুগি।’
উল্লেখ্য, ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের জলমহাল নীতির আওতায় সরকারি প্রতিপাদ্য ছিল ‘জাল যার জলা তার’। জলমহাল ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রে এলাকার প্রভাবশালীদের প্রভাব রুখে দিতেই এ নীতি চালু করা হয়। স্থানীয় মৎস্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রান্তিক জেলেদের কাছে ইজারা সুবিধা পৌঁছে দিতে নীতি চালু করা হয়। কিন্তু ইজারা নেওয়া জলমহালে মাছ ধরা যে বেআইনি এটি মানতে চাইছেন না কেউই। ফলে ইজারাদারদের জন্য তৈরি হয়েছে সংকট।
এ বিষয় নিয়ে কথা হয় দশঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আরকান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ জেলেরা আমাদের ইজারাকৃত বিলে জোরপূর্বক অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। আমরা হাওরে গেলে প্রভাবশালীরা তাদের লোক ও দলবলসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায় এবং আমাদের হুমকি দেয়। পাশাপাশি তারা থানা পুলিশ নিয়েও আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি মাছ ধরার জন্য নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে অবাধে মাছ শিকার করছে। এতে করে মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে ও মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এ বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজি আতাউর রহমান বলেন, ‘চাউলধনী বিল কে লিজ নিয়েছে তা আমার জানা নেই। পুলিশ কাউকে ভয় দেখায় না। পুলিশ মানুষের সেবায় নিয়োজিত।’
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহানের মোবাইলে বার বার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।