মাহমুদুল্লাহকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্ত করা নিয়ে কম জল ঘোলা হয় নি। তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে ভারতের যাওয়ার টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় বিশ্বকাপে দলে সুযোগ পাওয়াই ছিল অনিশ্চিত। ক্রিকেটভক্তদের তুমুল সমালোচনার মধ্যে শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ স্কোয়াডে নেয়া হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তবে ভক্তদের সেই আস্থার প্রতিদান বুঝিয়ে দিয়েছেন কড়ায় গন্ডায়। প্রমাণ করে দিয়েছেন এখনো ফুরিয়ে যান নি।
এবারের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন ‘বুড়ো’ তকমা পাওয়া মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচের ৭ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ৩২৮ রান করেছেন তিনি।
মাঝে কোথাও ছিলেন না এই ৩৭ বছর বয়সি ক্রিকেটার। দলের বাইরে রাখা হয়েছে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের সিরিজ এবং এশিয়া কাপে। তাকে বাইরে রেখেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড সাজানোর চিন্তা ভাবনা চূড়ান্ত করা ছিল। ভাবা হয়েছিল রিয়াদের বয়স হয়েছে, ফিটনেসে ঘাটতি। ক্ষিপ্রতা, চপলতা কমে গেছে। ব্যাটের জোরও নিশ্চয়ই কমেছে। হয়তো তরুণদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না।
তাই রিয়াদকে রেখে মিডল অর্ডারের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়েছিল আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং শামীম পাটোয়ারীকে; কিন্তু তারা ক্রমাগত ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই রিয়াদকে ১৫ জনের বিশ্বকাপ দলে নিতে বাধ্য হন নির্বাচকরা।
বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েও হয়েছে নাটক আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একাদশে জায়গা পেলেও পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাদ দেয়া হয়।
অবশেষে ব্যাট করার সুযোগ পান তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। চেন্নাইয়ের ওই ম্যাচে রিয়াদকে খেলানো হয় ৮ নম্বর ব্যাটার হিসেবে। তবে সব জল্পনা-কল্পনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন রিয়াদ। ৮ নম্বরে নেমেও ৪৯ বলে ৪১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে ফেলেন তিনি। দেখিয়ে দেন কেনো অভিজ্ঞতাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর ভারতের শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে সমান তিনটি করে ছক্কা ও বাউন্ডারিতে ৩৬ বলে ৪৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১১ বলে ৪ ছক্কা ও ১১ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১১১, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭০ বলে ৫৬, শ্রীলংকার সঙ্গে ২২ আর সর্বশেষ শনিবার পুনেতে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২৮ বলে তিন ছক্কায় ৩২ রানের এক আক্রমণাত্মক ইনিংস উপহার দেন রিয়াদ।
৮ ম্যাচের ৭ ইনিংসে একটি শতক ও অর্ধশতকসহ এসেছে মোট ৩২৮ রান।
শুধু রান করায়ই নয়, ব্যাটিং গড় (৫৪.৬৬) ও ছক্কা (১৪ টি) হাঁকানোয়ও ব্যাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবার ওপরে রিয়াদ। তানজিদ হাসান তামিম ছাড়া বাকি ব্যাটারদের চেয়ে স্ট্রাইকরেটটাও রিয়াদেরই (৯১.৬২) বেশি।