বিশ্বকাপে আফ্রিকান রূপকথা লিখল মরোক্কা, বিদায় পর্তুগাল

স্পেনকে হারিয়েই ইতিহাসটা মরক্কো গড়েছিল। পর্তুগালকে হারাতে পারলেই ইতিহাসের পাতায় আরও একটি অধ্যায়ের জন্ম দেয়ার হাতছানি ছিল আফ্রিকান দেশটির সামনে। আর হলও সেটি। রোনালদোকে কান্নায় ভাসিয়ে আফ্রিকান রূপকথা লিখল মরক্কো।

মরোক্কানরা তখন এক গোলে এগিয়ে। বিশ্বকাপের শেষ চারের লড়াইয়ে টিকে থাকতে আক্রমণের পর আক্রমণ করেই যাচ্ছে পর্তুগাল। পেপের একটা হেডার বেরিয়ে গেল পোস্ট ঘেঁষে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোসহ পর্তুগিজদের আফসোসটা চোখেমুখে ফুটে উঠছিল, সমতা ফেরানোর মোক্ষম সুযোগটা যে বেরিয়ে গেল হাত ফসকে!

সেই সমতা আর ফেরাতে পারেনি পর্তুগাল। পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করল মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া হয়ে গেছে তাদের।

দলে সিআর সেভেনের অনুপস্থিতি ম্যাচের শুরু থেকেই ভোগাচ্ছিল পর্তুগিজদের। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও প্রতিপক্ষের গোলমুখে শট ও আক্রমণে দিক থেকে প্রথমার্ধে বেশ পিছিয়েই পর্তুগাল।

ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে নিয়ে মরক্কোর ওপর চাপ বাড়াতে থাকে পর্তুগাল। ৫ মিনিটের মাথায় প্রথম আক্রমণ চালালেও সেখানে সফলতার দেখা মেলেনি মরক্কোর গোলরক্ষক বুনোর সুবাদে। এরপর মরক্কোর গোলমুখে খুব একটা আক্রমণের দেখা মেলেই পর্তুগালের।

ম্যাচের ৩৫ মিনিটে পর্তুগালের গোলমুখে প্রথম আক্রমণ চালায় মরক্কো। সেবার ব্যর্থ হলেও আক্রমণের ডেডলক বাড়ে ব্যাক টু ব্যাক অ্যাটাক। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে সফলতা পাচ্ছিলেন না তারাও।

ম্যাচের ৪২ তম মিনিটে আতিয়াতের ক্রস ডি বক্সের ভেতর পেয়ে যান এন নেসিরি। সেখান থেকে দুর্দান্ত এক হেডে দলকে এগিয়ে দেন এ স্ট্রাইকার। আগের দুইবার হেড মিস করলেও এবারে আর ভুল হয় নি তার। আর বাকিটা সময় বলের দখলে নিয়ে দুটো আক্রমণ চালালেও সফল হয়নি মরক্কো। আর তাতেই ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করতে হয় তাদের।

ক্রিশ্চিয়ানোর অভাব প্রথমার্ধে টের পেয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাকে নামান কোচ। আর তার ফল হাতেনাতেই দেন সিআর সেভেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মরক্কোর জালে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে পর্তুগাল। বল নিজেদের দখলে রেখে একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে।

শুরু থেকেই বল মরক্কোর পায়ে যাচ্ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গোলের দেখা মিলছিল না পর্তুগিজদের, যেন ভাগ্যদেবতা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তাদের থেকে। ৬৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। কিন্তু গোলপোস্ট মিস করে তার সেই শট। যাতে করে গোলবঞ্চিত থাকতে হয় পর্তুগিজদের।

চার মিনিট বাদেই ডি বক্সের বাইরে থেকে বকসে বল উড়িয়ে দেন ব্রুনো। মরক্কোর বক্সে থাকা রোনালডোর নাগালের বাইরে থেকেই সেটি চলে যায় গোলরক্ষকের হাতে।

৭০ তম মিনিটে ডি বক্সের বাম দিক থেকে ফাউলের সুবাদে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। সেখান থেকে ড বক্সের ভেতর ফাঁকায় পাস দেন । কিন্তু বল রিসিভ করতে না পারায় দলকে সমতায় ফেরানোর দুর্দান্ত সুযোগ মিস করেন বার্নাদো সিলভা।

৭২ থেকে ৭৫ তম মিনিটে এবশ কিছু জোড়াল আক্রমণ চালায় পর্তুগাল। কিন্তু মরক্কোর রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক বুনো ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয় সেটি ভেঙ্গে জালের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়নি রোনালডো-সিলভাদের পক্ষে।

৮২ মিনিটের মাথায় ফের সম্মিলিত আক্রমণের শিকার হয় মরক্কো। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর থেকে সিলভার নেয়া সেই নিশ্চিত গোলের শট ঠেকিয়ে দিয়ে দলের ব্যবধান ধরে রাখেন বুনো।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন মরক্কোর ওয়ালিদ সেদিরা। কিন্তু ১০ জনের মরক্কোর বিপক্ষে সফলতার মুখ দেখছিল না পর্তুগাল। অতিরিক্ত সময়ের সপ্তম মিনিটে গোলপোস্টের একদম কাছে থেকে ফাঁকায় নেয়া এক হেড থেকে দলকে সমতায় ফেরানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও সেটি মিস করেন পেপে। আর তাতেই একপ্রকারে নিভে যায় পর্তুগালের জয়ের স্বপ্ন।

শেষতক আর গোলের দেখা মেলেনি পর্তুগালের। আর তাতেই আরও একবার আন্ডারডগ হয়ে আসা মরক্কোর হাত ধরে রচিত হল আরেকটি ইতিহাস।