বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়নের কামারগ্রাম এলাকায় সিলেট-বারইগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই ফেলা হচ্ছে স্থানীয় চারখাই বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা। প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কের পাশে ময়লা ফেলে স্থানটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।
ময়লার পঁচা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা, আশপাশে ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় পুরো এলাকা দূষিত হচ্ছে। এতে পথচারীসহ স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও জায়গার মালিকদের একজন বাজারের বর্জ্য ফেলতে বাধা দিলে জায়গার অপর মালিক আব্দুল জলিলের পরিবারের লোকজন হুমকি দেন। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন জায়গার মালিক সাইদুল করিম রেজা।
তিনি জানান, সোমবার চারখাই বাজারের কাছে আব্দুল জলিলের পরিবারের সদস্যরা তাকে এব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করতে বলে।
চারখাই বাজার বণিক সমিতির দায়িত্বশীলরা জানান, ময়লা ফেলার স্থানে প্রতি মাসে এক ট্রাক বিট বালু প্রদান করার হবে এ শর্তে বাজারের ময়লা আব্দুল জলিলের নিচু জায়গায় ফেলা হচ্ছে। জনবসতি এলাকায় কোন রকম নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়া এ রকম ময়লা ফেলা এবং ময়লা ডাম্পিং করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি বণিক সমিতির দায়িত্বশীলরা।
প্রতি মাসে এক ট্রাক বিট বালু পাওয়ার কথা স্বীকার করে জায়গার মালিকদের একজন আব্দুল জলিল বলেন, নিচু জায়গা ভরাট করার মতো আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বাজারের ময়লা ফেলে জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে। বাড়ির পাশে ময়লা ফেলা হলেও সেখানে দুর্গন্ধ হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
জায়গার অপর অংশীদার সাইদুল করিম রেজা বলেন, পরিবারের সাথে সিলেট শহরে থাকার কারণে আমাদের মৌরসী জমিতে চারখাই বাজার বণিক সমিতি আমাকে না জানিয়ে ময়লা ফেলছে। আমি মৌখিকভাবে নিষেধ করেছি এবং একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে ময়লা না ফেলতে নির্দেশনা দিলেও ময়লা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। তিনি এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান।
রেজা বলেন, ময়লা ফেলা বন্ধ করতে বলায় আমাকে হুমকি দিচ্ছে আব্দুল জলিলের পুত্রসহ অন্যরা। নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে বিয়ানীবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
কামারগ্রামের বাসিন্দা মাসুক আহমদ জানান, ময়লার পঁচা দুর্গন্ধের কারণে নিজ ঘরে থাকা যায়না, খুব ভোগান্তির মধ্যে আছি।
একই এলাকার আশরাফ উদ্দিন বলেন, পঁচা দুর্গন্ধের সাথে বেড়েছে মশা ও মাছির উপদ্রব। দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ। একই সাথে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
চারখাই বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিরণ আহমদ বলেন, বাজারের ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারীত কোন স্থান নেই। জায়গার মালিক আব্দুল জলিলের সাথে মাসে এক ট্রাক বিট বালু প্রদান করার শর্তে বাজারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
এতোদিন কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাননি জানিয়ে হিরণ আহমদ বলেন, গ্রামবাসীর ভোগান্তি হলে তারা বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
চারখাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হোসেন মুরাদ চৌধুরী বলেন, বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় বাজার পরিচালনা কমিটি জায়গার মালিকের অনুমতি নিয়েই বর্জ্য ফেলছেন। তবে জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা উচিত।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেব দুলাল ধর বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম জানান, জায়গার মালিকের অনুমতি পেলেও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোন অবস্থায় বর্জ্য ফেলা যাবে না। বিষয়টি চারখাইবাজার বণিক সমিতির দায়িত্বশীলদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে। তিনি জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী কিংবা জায়গার মালিকের কোন অভিযোগ পাননি।