স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছেন সিলেটবাসী। এখানকার প্রতিটি জেলার একেকটি উপজেলা পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। অনেকেই সিলেটের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বানভাসি মানুষের জন্য ট্রাকভর্তি খাবার এনে সিলেটে বিতরণ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর নামের একটি মানবিক ও সামাজিক সংগঠন।
সিলেট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও ওষুধপত্রসহ ১৩ ধরনের অতিপ্রয়োজনীয় খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর ঘাসিটুলায় ইউসেপ বাংলাদেশ পরিচালিত ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুল আশ্রয়কেন্দ্রে এসব ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুলের এলিট কমিটির সদস্য ছামির মাহমুদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আজহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের সেন্টার ইনচার্জ এস এম আবু জাফর সিদ্দিকী ও স্কুলের শিক্ষিকা শাহিদা জামান, জাগো নিউজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফি ও ইত্তেফাকের রিপোর্টার ইফতেয়ার রিফাত।
এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্য রাকিবুল ইসলাম, আশিকুল ইসলাম আশিক, আরমান আদনান, আরিয়ান নাঈম, মো. সামছুল হক, নজরুল ইসলাম নাঈম, হাফিজুর রহমান হামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিতরণ করা প্রতি ব্যাগ ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি চাল, এক কেজি চিড়া, বিস্কুট আধা কেজি, পাউরুটি দুটি, এক ডজন মোমবাতি, দিয়াশলাই এক ডজন, দুই লিটার বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি, এক কেজি চিনি, এক বোতল ভায়োডিন, একটি ব্যান্ডেজ, পাঁচটি খাওয়ার স্যালাইন, এক পাতা নাপা ট্যাবলেট, ডায়রিয়ার ওষুধ এক পাতা, মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট ও এক পাতা পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও জাগোনিউজ২৪ডটকম এর নিজস্ব প্রতিবেদক ছামির মাহমুদ বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট অঞ্চলে এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এখানকার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ বন্যাদুর্গত। আশ্রয়কেন্দ্র ও শুকনো খাবারের সংকটে ভুগছেন লোকজন। এ অবস্থায় মানবিক ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সিলেটে ছুটে আসায় অসংখ্য ধন্যবাদ ও সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, এই মানবিক বিপর্যয় আমরা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারব যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের মতো দেশের বিত্তবান ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক দলগুলো মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমরা একসাথে এরকম মানবিক সংকট সবসময় মোকাবেলা করে আসছি। এবারও সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব ইনশাল্লাহ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর অজ্ঞাতনামা ও পরিচয়হীন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে তারা ৪৮টি বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজ সম্পন্ন করেছে। এই সংগঠনটি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান ছাড়াও অক্সিজেন সেবা ও টেলি-মেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মানবিক ও সমাজসেবামূলক কাজে বাতিঘর অনেক এগিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবে উপহারস্বরূপ সমাজের হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বাতিঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া।