আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় একটি হত্যা মামলায় সিলেটের কলেজছাত্র ইমন আহমদ (২৪) দীর্ঘ ৭ মাস ধরে বিনা দোষে কারাগারে আছেন। তিনি সিলেট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের উড ওয়ার্কিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। তার বাসা নগরীর কুয়ারপাড়ে।
ইমনের স্বজনরা জানান, ওই হত্যায় ‘কালা ইমন’ নামে একজন জড়িত। বিষয়টি জেনেও মামলার এজাহারে কলেজছাত্র ইমনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া এক আসামিও বলেছে, ঘটনার সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ‘কালা ইমন’। মামলার বাদী বিষয়টি নিশ্চিত হলেও আদালতকে কিছু বলছেন না।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট নগরীর এমএজি ওসমানী মেডিকেলের ৩ নম্বর ফটকের সামনে নাজিম উদ্দিন (২০) নামের এক হোটেল শ্রমিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় আহত হন শাহ আলম ও রুম্মান। তারা নগরীর জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও নিহত নাজিমের আত্মীয়।
ঘটনার রাতেই সিলেট কোতোয়ালি থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত নাজিমের বাবা নুর মিয়া। মামলার আসামিরা হলেন- নগরীর মুন্সিপাড়ার সবুজ মাঠ এলাকার জুয়েল আহমদ, মুন্সিপাড়ার রুমেল আহমদ, সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার সোহাগ, মোজাম্মেল, মুন্সিপাড়ার ইমন ও জনি এবং কুয়ারপাড়ের ইমন, একই এলাকার সামি, বাগবাড়ি এলাকার কবির ও সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার রফিকুল।
নাজিম খুন হওয়ার সময় ঘটনাস্থল থেকে জনতা জুয়েল আহমদকে আটক করে পুলিশে দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম জানায় জুয়েল। এর মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মামুন মিয়ার ছেলে ‘কালা ইমন’ ছিল।
নিহত নাজিমের এক আত্মীয় জানান, নাজিমের বাবা নুর মিয়া থানায় মামলা করার সময় তিনিও সঙ্গে ছিলেন। কুয়ারপাড়ের ইমনকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। ঘটনায় এই ছাত্র জড়িত নন দাবি করলে থানা-হেফাজতে থাকা জুয়েলকে ডাকা হয়। কুয়ারপাড়ের ইমনের ছবি দেখানো হলে জুয়েল জানায়, ছবির তরুণকে সে চেনে না।
নাজিমের ওই আত্মীয় আরও বলেন, জুয়েল ১৩ এপ্রিল সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সে বলে, তাদের সঙ্গে ছিল ‘কালা ইমন’।
১৪ এপ্রিল কলেজছাত্র ইমনকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পরে তাকে ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী আমাদের কিছুই করার নেই। তবু জজ স্যার বা ঊর্ধ্বতন কেউ কারা পরিদর্শনে এলে ইমনের বিষয়টি অবহিত করা হবে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে জানতে চাইলে ইমন জানান, ঘটনার দিন ইফতারের পর তার হবু শ্বশুরবাড়ি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বলাউড়া এলাকার কসকালিকা গ্রামে যান। রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। অথচ এজাহারে বলা হয়েছে, খুনের ওই ঘটনা ঘটে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে। ঘটনার সময় হামলাকারীদের আঘাতে আহত হন শাহ আলম ও রুম্মান। তারাও কলেজছাত্র ইমনকে ঘটনাস্থলে দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
মামলার বাদী নিহত নাজিম উদ্দিনের বাবা নুর মিয়া বলেন, হয়তো তার কোনো শত্রু কুয়ারপাড়ের ইমনের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ইমনের ভাই রোমন আহমদ রুনু বলেন, আমার ভাই যে নির্দোষ, তা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এ এইচ এম রাশেদ ফজল জানেন।
ইমনের আইনজীবী টিপু রঞ্জন দাশ বলেন, এজাহারের ভাষ্যমতে তার (ইমনের) কোনো অপরাধ নেই। ভিকটিমকে কোনো কিছু করার অভিযোগও নেই। তিনজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে, তাদের দুজন শুধু ইমন বলেছে। একজন স্পষ্ট করে কালা ইমন বলেছে। এজাহারে দুজন ইমন আছে। আমাদের কাছে সব ধরনের ডকুমেন্ট আছে, এই ঘটনার সঙ্গে কুয়ারপাড়ের ইমনের সম্পৃক্ততা নেই। আমরা আদালতকে সেটি বলেছি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বাদীর দেওয়া এজাহারেই মামলা রেকর্ড হয়েছে। নির্দোষ কেউ হত্যা মামলার আসামি হোক, সেটা আমরাও চাই না। তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকে ওই আসামির বিষয়টি পুনরায় গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখতে বলব।