সেই বন্যার পর থেকে অন্ধকারে শাল্লার এক হাজার পরিবার

সুনামগঞ্জের শাল্লা শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হওয়া সত্ত্বেও এ উপজেলার আগুয়াই, মৌরাপুর, দত্তপাড়া, শাসখাই ও বিলপুরের প্রায় এক হাজার পরিবার এখনও অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে।

২০১৭ সাল থেকে গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পূর্ব পর্যন্ত সরকারের দেওয়া সৌর বিদ্যুতের আওতায় ছিলেন এসব গ্রামের মানুষ। কিন্তু গত বছরের ভয়াবহ বন্যা এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবকিছু তছনছ করে ফেলে। বন্যার সময় থেকে প্রায় ১০ মাস যাবত বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে উপজেলার এই পাঁচটি গ্রাম।

তবে বন্যায় একেবারে অকেজো হয়ে পড়ায় দিরাই পিডিবি অফিসে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বকেয়া বিলসহ সব মিটার জমা দিয়েছেন গ্রাহকেরা।

এ ব্যাপারে পিডিবি’র দিরাই শাখার আবাসিক প্রকৌশলী মো. রুবেল রানা বলেন, আগে বকেয়া বিলগুলো দিতে হবে। তারপর ঊর্ধতন কর্মকর্তার সাথে বিস্তারিত কথা বলে আপনাকে জানাতে পারবো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যুৎ না থাকায় শাসখাই (পঞ্চগ্রাম) বাজারে ব্যবসাতে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রসার ঘটাতে পারছেন না ব্যবসায়িরা। দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যুৎ বিহীন থাকায় এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাসহ অনেক অনুন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এলাকাটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকার ভেতরে গরু-ছাগল বসবাস করছে। খুঁটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কোনো জায়গায় উপড়ে পড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন, কোনো জায়গায় তা মানুষের মাথা স্পর্শ করছে। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন বিদ্যুৎ পেলে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন। কিন্তু তাদের কপালে জুটেছে এর উল্টো।

গ্রাহকরা এই প্রতিবেদককে জানান, তারা বিল দিতে ইচ্ছুক থাকা সত্বেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে ঠিকমতো বিল নিতে আসেনি।
এদিকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিও টাঙানো হয়েছে এই পাঁচ গ্রামে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কেন সংযোগ পাচ্ছে না এ প্রশ্নের সদুত্তরও খুঁজে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

দেখা যায়, শাসখাই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বন্যায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বন্যার আগে কোনোরকমে ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেলেও বন্যার কবলে পড়া এই প্রকল্পটি কোনো কাজে আসছে না এলাকাবাসীর। এতে শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই, দত্তপাড়া ও বিলপুর এই পাঁচটি গ্রামের লোকজন একেবারে অন্ধকারেই জীবনযাপন করছেন।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও বন মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ৪০০ কিলোওয়াটের প্রায় ৩২ কোটি টাকার এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। তারপর ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়ালি এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু এত টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিদ্যুৎ পেয়েও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো বিল না নেওয়ায় গ্রাহকদের কাছে জমা হচ্ছে মোটা অংকের বকেয়া বিল। তারপরও পিডিবি’র আশ্বাস ও নির্দেশনা পেয়ে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার আশায় মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন এলাকার বেশিরভাগ গ্রাহক।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ দিরাই সাব-জোনাল অফিসের এজিএম মো. নুরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সবকিছু রেডি করে রেখেছি। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর রহিম আফরোজ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়ামাত্র আমরা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে দেবো।

তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের সাংসদ মহোদয় অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা বলেন, শাসখাই এলাকার বিদ্যুতের বিষয়টি নিয়ে আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েছি। রহিম আফরোজ কর্তৃপক্ষ রাজিও হয়েছে। এখন তারা নো অবজেকশন দিলেই দ্রুত কাজ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমার যথেষ্ট তৎপরতা রয়েছে।