নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত শাওনকে যুবদল কর্মী দাবি করে সারাদেশেই চলছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নানা কর্মসূচি। অথচ শাওনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছেন তার ভাই। আসামি করা হয়েছে মোট পাঁচ হাজার জনকে। তবে কারও নাম উল্লেখ নেই, সবাইকে করা হয়েছে অজ্ঞাত আসামি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় সংঘর্ষে এই প্রাণহানির পর শাওনকে যুবদল কর্মী দাবি করে দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তার।
এর মধ্যে গত রাতে এই যুবকের বড় ভাই মিলন হোসেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলাটি করেছেন। এতে বলা হয়, শাওনের মৃত্যু হয়েছে অবৈধ অস্ত্রের আঘাতে। আর এর জন্য দায়ী করা হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের। বলা হয়, তারা যখন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করছিল, তখন শাওন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
যদিও এই মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। দলটির মহানগর শাখার সিনিয়র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘শাওনের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে পুলিশ।’
তবে পুলিশ চাপ সৃষ্টি করে মামলার কথা অস্বীকার করেছে। আর মামলার বাদী শাওনের ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মামলায় যা বলা হয়েছে :
মামলায় বলা হয়েছে, শাওন প্রধান ফতুল্লার নবীনগর বাজারে ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওয়ার্কশপের মালামাল কিনতে বাসা থেকে বের হন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুজ্জামান এজাহারের বরাত দিয়ে বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, ১০টার দিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আনুমানিক পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী ইটপাটকেল, লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে।
‘বেলা পৌনে ১১টার দিকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকা দিয়ে শাওন প্রধান যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকেন। এ সময় অবৈধ অস্ত্রের গুলি ও ইটের আঘাতে শাওন মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যান।
‘তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তার লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।’
বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শাওনের ভাইয়ের মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলার জেরে শাওন নিহত হন, এমন অভিযাগ করে শাওনের বড় ভাই হত্যা মামলা করেছেন।’
তিনি জানান, এই ঘটনায় তারাও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে এই মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম সোহাগ জানিয়েছেন, শাওনের ভাইয়ের করা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র : নিউজ বাংলা