চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে খোঁজ মিলছে না মো. রুবেলের (২৬)। তিনি সেখানে কাজ করতেন। বিস্ফোরণে মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন কেউ বলতে পারছে না।
সোমবার (৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা দিতে আসেন রুবেলের স্ত্রী মুন্নি আকতার। এ সময় তার কোলে ছিল তিন বছরের সন্তান মারিয়া আকতার।
মুন্নি আকতার বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। ৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আমার স্বামীর খোঁজ পাচ্ছি না। সব হাসপাতালে গিয়েছি, কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে এসে শুনি, যেসব লাশের পরিচয় মেলেনি, বা যারা স্বজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না, তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই আমি ও আমার মেয়ে নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।’
এদিকে হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটেও ভাই মনির হোসেনের (৩২) খোঁজ পাননি ছোট বোন মোহছেনা আকতার কলি। মনির সীতাকুণ্ড উপজেলার ফকিরহাট এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে।
কলি বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমার ভাই বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী রহিমা আকতার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ মিলছে না। আমরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছি।’
বাবা আবদুল হান্নান বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমার ছেলে এই ডিপোতে কাজ করছে। সে গাড়িচালক ছিল। দুর্ঘটনার পর থেকে তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তাই ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছি।’
বিস্ফোরণের পর থেকে সন্ধান মিলছে না বিএম কনটেইনার ডিপোর গাড়িচালক আবুল হাসেমের (৪৫)। তিনি সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকার ছগির আহমেদের ছেলে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আবুল হাসেমের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভাই আনিসুল হক। সকালে চমেক হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘আবুল হাসেম বিএম কনটেইনার ডিপোর গাড়িচালক। ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা সব হাসপাতাল ঘুরেও খুঁজে পাইনি।’
বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আরও অনেকের মতো খোঁজ মিলছে না মাঈন উদ্দিনের। তার সন্ধানে চমেক হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা। ছেলের সন্ধানে ডিএনএ নমুনা দিতে নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়া থেকে এসেছেন হেমায়েত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়ি চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে আমার ছেলে। বিস্ফোরণের সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল। এরপর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
হেমায়েত উল্লাহ আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় আমাকে ফোন করেছিল। ভিডিও কলে আগুন দেখিয়েছিল। আমরা তাকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে গিয়েও খুঁজে পাইনি।’
বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনে মৃত ২২ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার (৫ জুন) রাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘২২ জনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও ১৯ জনের লাশ হাসপাতাল মর্গে আছে। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ নিহতদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করছে।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাকিদের লাশ ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার পর হস্তান্তর করা হবে। তবে রিপোর্ট পেতে প্রায় এক মাস সময় লাগবে। ততদিন এসব লাশ মর্গের ফ্রিজারে রাখা হবে।’