হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার গ্যানিংগঞ্জ বাজারস্থ জনাব আলী সরকারি কলেজ রোডে অবস্থিত ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসে একই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের রিপোর্ট দুইবারে দুই ধরণের পাওয়া গেছে। পরে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে আগের রিপোর্টটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়।
জানা যায়, শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) বানিয়াচং উপজেলার গ্যানিংগঞ্জ বাজারস্থ বানিয়াচং ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসে উপজেলা সদর ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের সফাত উল্লাহর স্ত্রী আজিমা বেগম (৫৭) তার শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে। ডিজিল্যাবের টেকনিশিয়ান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে জানিয়ে রোগীর শরীরে রক্ত দিতে হবে বলে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের উপদেশ দেন। রোগী আজিমা বেগমের রক্তের গ্রুপ জানার জন্য ডিজিল্যাব টেকনোলজিস্ট মনির খান স্যাম্পল সংগ্রহ করে ‘এবি’ পজিটিভ বলে রিপোর্ট প্রদান করেন এবং ‘এবি’ পজেটিভ গ্রুপের দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করে শরীরে পুশ করতে বলেন।
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) স্বজনরা এবি পজিটিভ রক্তদাতা নিয়ে বানিয়াচং বড়বাজার মেডিকেল সার্ভিসে রক্তের ম্যাচিংয়ের জন্য আজিমা বেগমের রক্তের স্যাম্পল নিয়ে গেলে দায়িত্বরত টেকনিশিয়ানরা পরীক্ষা করে দেখেন আজিমা বেগমের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ।
দুটি সেন্টারে আলাদা রক্তের গ্রুপ হওয়ায় তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীকে নিয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে রক্তের গ্রুপ জানার জন্য স্যাম্পল দিলে দায়িত্বরতরা এ পজিটিভ শনাক্ত করেন। দুই জায়গার দুই রিপোর্ট প্রদান করায় রোগীর স্বজনরা সংশয়ে পুনরায় শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ডিজিল্যাবে আজিমা বেগমের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য স্যাম্পল দেন। তখন ল্যাব টেকনোলজিস্ট আতিকুর রহমান আজিমা বেগমের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের রিপোর্টে আসে ‘এ’ পজিটিভ। এতে আজিমা ও তার পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে! রোগী ও স্বজনদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। তাদের প্রশ্ন, একই রিপোর্ট একই প্রতিষ্ঠানে দুই রকম হয় কিভাবে? এমন অবস্থায় রোগী আজিমা বেগমকে রক্ত দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রাইভেট ক্লিনিকে বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করিয়েও যদি এমন ভুল রিপোর্ট পাওয়া যায়, তবে তা খুবই দুঃখজনক। রোগীর কোন সমস্যা হলে এর দায়ভার কে নিবে? এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তদারকি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও হবিগঞ্জ প্রাইভেট হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশন এর সহসভাপতি রেজাউল মোহিত খান বলেন, ‘ট্যাকনিকেলি বা ল্যাব টেকনোলজিস্টের কারণে রিপোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে যেকোন রোগীকে চিকিৎসা করালে সুস্থতা থেকে অসুস্থ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। দু’টি রিপোর্ট একই প্রাইভেট হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মনির খানের স্বাক্ষর রয়েছে। একই ব্যক্তির দুইবারে দুই রকম গ্রুপ শনাক্ত করা মারাত্মক ভুল। এ ধরণের ভুলে রোগী যেকোন মানুষের প্রাণের সংশয় দেখা দিতে পারে। প্রাইভেট হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এর দায়বার নিতে হবে। জনস্বার্থে এসব হাসপাতালের তদারকি করে আইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।’
বানিয়াচং উপজেলার গ্যানিংগঞ্জ বাজারস্থ ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসের ইনচার্জ মো. আবিদুর রহমান জানান, আজিমা বেগমের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগটি সঠিক। রিপোর্টটি ল্যাব টেকনোলজিস্ট মনির খান অসাবধানতাবশত ভুল করেছে। এ জন্য আমরা দুঃখিত।
বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. শামিমা আক্তার জানান, ‘একই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ দুই রকম হতে পারে না। রক্তের গ্রুপ কখনো পরিবর্তন হয় না। যদি তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে রক্ত রোগীর শরীরে দেওয়া হতো তাহলে তো তার জীবন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে যেতো। তবে কেন রিপোর্টে এ ধরণের মারাত্মক ভুল হলো বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’