বানিয়াচংয়ে কেটে দেওয়া হলো অর্ধশতাধিক লাউ গাছ

সাধের লাউয়ের আর কাঙ্ক্ষিত ফলন হলো না কৃষক ছদু মিয়ার গাছে। চারাগাছ ছোট থেকে বেশ বড় হয়ে গিয়েছিল। ফুল-ফল ধরে কিছু লাউও বড় হয়েছিল। কিন্তু গাছগুলো দুর্বৃত্তরা কেটে দিয়েছে। পৈতৃক সম্পদে চাষ করা ২৬ শতাংশ জমির অর্ধশতাধিক লাউ গাছে ফুল ও ফল সঠিকভাবে আসার আগেই গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মকারিমপুর মৌজার তাতারি মহল্লার বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়কের পার্শ্ববর্তী ফসলের মাঠে গতকাল শুক্রবার (১০ মার্চ) রাতে গাছগুলো কাটা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে তার পালিত গরু হাওর থেকে নিয়ে আসার সময় পর্যন্ত লকলকে লাউয়ের ডগা দেখেই ফিরেছিলেন ঘরে।

আজ শনিবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টায় সেই গরু চড়াতে গেলে ছদু মিয়া ক্ষেতে গিয়ে দেখেন মাচার গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন রোদের কারণে এমনটা হয়েছে। কিন্তু পরে দেখতে পান সব গাছ গোড়া থেকে কাটা।

কৃষক ছদু মিয়া এই জমিতে প্রায় ১৫ বছর যাবত মৌসুমভিত্তিক নানা ধরণের ফসল বছরজুড়েই আবাদ করেন। বেশিরভাগই চাষ করেন সবজি। এ বছর পুরো ২৬ শতাংশ জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। ছদু মিয়ার পরিবার কৃষি নির্ভরশীল পরিবার। কৃষি থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনোরকম দিনাতিপাত করে সংসার চালান। এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে যারা জড়িত আছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

ছদু মিয়া গত আগস্টের শুরুতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে হাইব্রিড লাউয়ের বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। পরে জমিতে বীজ বপন করলে অল্পদিনেই গাছ বড় হয়, ফল আসার উপযোগী হয়ে ফল ধরে কিছু লাউ বড়ও হয়েছিল। ছদু মিয়া সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তাতে মাচা দিয়েছেন। ক্ষেতে সব মিলিয়ে ছদু মিয়ার খরচ হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকা। যার বেশিরভাগ তিনি ধার নিয়ে জোগাড় করেছিলেন।

ছদু মিয়া বলেন, গত দেড় থেকে দুই মাস ক্ষেতটিতে রাত-দিন কাজ করেছি। প্রতিটি গাছেই আমার হাতের ছোঁয়া রয়েছে। গাছের সঙ্গে যারা শত্রুতা করে তারা কেমন মানুষ? আশা ছিল এ বছর ক্ষেত থেকে লাখ টাকার মতো লাউ বিক্রি করবো। কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কীভাবে আমার দেনা পরিশোধ করবো?

বানিয়াচং উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হককে মুঠোফোনে না পেয়ে ৩ নম্বর ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান জানান, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ছদু মিয়াকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দ্রুত থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।