বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে দেশীয় টাইলসের ওপর ১৫ শতাংশ ও স্যানিটারি পণ্যে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রয়েছে। এই শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে এসব পণ্যের দাম কমবে। খবর প্রথম আলোর।
আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হবে। আগামী বাজেটে বিবেচনার জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানি সমিতি (বিসিএমইএ)। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি পর্যায়ে অতিরিক্ত শুল্ক-কর প্রত্যাহার, কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে অপচয় বিবেচনায় নেওয়া, বিদেশি সিরামিক পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্যবৃদ্ধিসহ প্রভৃতি বিষয়।
বিসিএমইএ সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছরে কাঁচামাল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না করলে লোকসান দিয়ে নয়তো গ্রাহকের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে।
বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সিরামিক পণ্যের দেশীয় বাজার প্রায় ৮ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার। তার মধ্যে শুধু টাইলসের বাজার ৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার। এর বাইরে ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার স্যানিটারিওয়্যার এবং ৮৬৮ কোটি টাকার তৈজসপত্রের বাজার রয়েছে।
একসময় আমদানিনির্ভরতা থাকলেও এখন সিরামিক খাতে দেশীয় হিস্যাই বেশি। সার্বিকভাবে সিরামিক খাতের মোট বাজারের ৮০ শতাংশের বেশি এখন দেশীয় কোম্পানির দখলে। বাকিটা আমদানি হয়। বর্তমানে সিরামিক খাতে মোট কারখানা রয়েছে ৭৪টি। এর মধ্যে ৩১টি টাইলসের, ২০টি তৈজসপত্রের ও ১৯টি স্যানিটারিওয়্যারের কারখানা। এসব কারখানায় মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।
সিরামিক পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৫ ধরনের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি করতে হয়। এগুলো আমদানিতে ২৬ থেকে ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে। এ ছাড়া অনেক সময় কাস্টমস থেকে পণ্য ছাড়ের সময় ইনভয়েস মূল্যের চেয়ে বাড়তি আমদানি মূল্য দেখিয়ে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। ফলে অত্যাবশ্যক কাঁচামাল বিবেচনা করে এখান থেকে অতিরিক্ত শুল্ক-কর কমানো প্রয়োজন বলে জানায় সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানি সমিতি।
সংগঠনটি জানায়, সিরামিকের পণ্যের কাঁচামালের ৮০ শতাংশই প্রাকৃতিক খনিজ মাটি বা ক্লে জাতীয় উপাদান, যা আমদানিনির্ভর। এসব কাঁচামালে ৩৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত পানি, আর্দ্রতাসহ বিভিন্ন উদ্বায়ী পদার্থ থাকে, যা উৎপাদনের সময় অপচয় হয়। ফলে এসব কাঁচামাল আমদানির সময় ৩৫ শতাংশ অপচয় ধরে শুল্কায়ন করার প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া বিদেশে তৈরি সিরামিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে বিসিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ৪০ শতাংশ বাড়লেও বিক্রয়মূল্য বাড়ানো গেছে মাত্র ৫ শতাংশ। এতে আমদানি করা সিরামিক পণ্যের সঙ্গে তারা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে।