একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে (১২ সেপ্টেম্বর) পৃথিবীর মোহ ত্যাগ করে চিরতরে বিদায় নেন তিনি।
বাউলিয়ানার এই মুকুটবিহীন সম্রাট ১৯১৬ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইব্রাহিম আলী ও মাতা নাইওরজান।
পারিবারিক অভাব অনটনে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করা ওই কিংবদন্তির জীবদ্দশায় তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ হয়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও আব্দুল করিম ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত, যার ছাপ তিনি রাখেন তার কথা ও সুরে।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্বাধিকার আন্দোলনে শাহ আব্দুল করিমের গান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালিকে। শাহ আব্দুল করিম ছিলেন একজন বিচক্ষণ গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীত রচয়িতা।
কেবল এখানেই শেষ নয়, তিনি ছিলেন বাউল-আঙ্গিকের একজন একচ্ছত্র অধিপতি । শাহ আব্দুল করিমের হাত ধরেই বাউলা গানের নতুন রূপ উন্মোচিত হয়েছিল। তার মরমি কথা, হৃদয় ছোঁয়া সুর তাকে হাওরের রাখাল বালক থেকে বাউল সম্রাটের আসনে বসিয়েছে।
বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না চলে না, রঙের দুনিয়া তরে চায় না, তোমরা কুঞ্জ সাজাও গোসহ এমন অসংখ্য গানের রচয়িতা ছিলেন তিনি।
গানের রাজা শাহ আব্দুল করিমের এমন গানের মাধ্যমেই তিনি হয়ে উঠেন মানুষের সুখ-দুঃখ, প্রেম-যন্ত্রণা ও স্বপ্নের এক কারিগর। খুব সুক্ষ্মভাবে তিনি তাঁর প্রতিটি গানে ফুটিয়ে তুলেছিলেন মানুষের হৃদয়ের গহিন অনুভূতি আর গ্রামীণ জীবনের আত্মাকে।
প্রথম জীবনে শাহ আব্দুল করিম বাউল, ভক্তিমূলক, জারি, সারি, রাধাকৃষ্ণবিষয়ক পালাগান গাইতেন। পরিণত বয়সে এসে গণসঙ্গীত রচনা ও পরিবেশন করে কিংবদন্তিতে পরিণত হোন আব্দুল করিম। এ পর্যন্ত তার সাতটি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে।
বাউল সম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ শাহ আবদুল করিম পরিষদের আয়োজনে তার নিজ গ্রামে দোয়া ও করিম গীতি আসরের আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানে সকলের দোয়া ও উপস্থিতি কামনা করেছেন বাউলের একমাত্র সন্তান শাহ নুরজালাল।
বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিম মরে গিয়েও তাঁর গান দিয়ে তিনি বিশ্বকে জয় করেছেন। যুগ থেকে যুগান্তর তাঁর লেখা এই গানগুলোই মানুষের মনে তাঁকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে এমনটাই বিশ্বাস সংগীতপ্রেমীদের।