উত্তর-পূর্ব ভারতকে যুক্ত রেখে বাংলাদেশে শিল্পকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সরবরাহ চেইনসহ বাংলাদেশে একটি শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে জাপান।
একইসঙ্গে এই অঞ্চলে বন্দর ও পরিবহনের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের বাইরে নেপাল ও ভুটানেও এই সরবরাহ চেইন বিস্তৃত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের পরে জাপানের এই প্রস্তাব সামনে এসেছে। ভারত সফরের সময় তিনি বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি নতুন শিল্প কেন্দ্রের ধারণার কথা বলেছিলেন যা ৩০০ মিলিয়ন মানুষের এই দরিদ্র অঞ্চলে উন্নয়নকে আরও জোরদার করতে পারে।
রয়টার্স বলছে, ফুমিও কিশিদার সফরের পর তার সরকার তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশে ১২৭ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল অনুমোদন করেছে। ওই তিন প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি এলাকায় একটি নতুন বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের বিষয়টিও রয়েছে। এই বন্দরের সাথে ত্রিপুরাসহ পার্শ্ববর্তী স্থলবেষ্টিত ভারতীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক বাজারের সংযোগ থাকবে।
ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোশি সুজুকি মঙ্গলবার ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় ভারতীয়, বাংলাদেশি এবং জাপানি কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে শিল্প কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি ভারত ও বাংলাদেশের জন্য একটি লাভজনক পরিকল্পনা হতে পারে।’
তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দরটি ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করার জন্য শিল্প কেন্দ্র তৈরির চাবিকাঠি হবে।
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি আগরতলার ওই বৈঠকে জাপানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, এটি ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে এবং জাপানি ও অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সাহায্য করবে।
রয়টার্স বলছে, পরিকল্পিত মাতারবাড়ি প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর যেখানে বৃহৎ জাহাজ চলাচলের সক্ষমতা থাকবে।
এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স নামক একটি থিংক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান দু’দিনের এই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের প্রধান সব্যসাচী দত্ত বলেছেন, প্রস্তাবিত এই সমুদ্রবন্দর থেকে ত্রিপুরা রাজ্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরে অবস্থিত এবং আঞ্চলিক রপ্তানিকারকদের কাছে এটি গেটওয়ে হয়ে উঠতে পারে।’
মূলত চীনের প্রভাব বিস্তারকে মোকাবিলা করতে গিয়ে বেইজিংয়ের মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিকল্প হিসেবে ভারত ও জাপান যৌথভাবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকাজুড়ে নানা অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলেছে।
সুজুকি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ৩০০টির বেশি জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। উভয় দেশ শিগগিরই একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর সেটি উৎপাদনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে এবং আরও বিদেশি কোম্পানিকে (বাংলাদেশে) আকর্ষণ করতে পারে।
অন্যদিকে ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল জাপান সফর করবেন বলে সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।