বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে ইইউ-কে চিঠি

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দুই সদস্য।

গত ১৪ই ডিসেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইইউ পার্লামেন্টের দুই সদস্য ইলান ডি বাসো এবং কার্স্টেন লক।

চিঠিতে তারা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসাবে আখ্যায়িত করে বোরেলের প্রতি এ নিয়ে উদ্বেগ জানানোর আহ্বান জানান। চিঠিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলের কর্মীদের উপর সহিংসভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা, যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ হাজার বিরোধী নেতা, কর্মী এবং সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যখন কোথাও প্রধান বিরোধী দলগুলোকে হয়রানি করা হয়, তাদের কর্মীদের নির্যাতন করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো হয়, তখন সেখানে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ইইউ পার্লামেন্ট এরইমধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এ নিয়ে একটি রেজ্যুলুশন উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শ্রমিক অধিকারের মতো ইস্যুগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, তারা বাংলাদেশে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের গণগ্রেফতার এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অত্যধিক বলপ্রয়োগের কারণে উদ্বিগ্ন।

জোসেপ বোরেলকে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেন, আমরা গত ৫ই নভেম্বর এক্সে বাংলাদেশে গণগ্রেফতার সংক্রান্ত আপনার পোস্টটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। সেখানে আপনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আমরা ভয় পাচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজছে না। গত সপ্তাহের ঘটনাগুলো বরং এর বিপরীত ইঙ্গিত দিয়েছে।

ওই পার্লামেন্ট সদস্যরা তাদের চিঠিতে ইইউ ‘এভ্রিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) পর্যবেক্ষণ মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টও তুলে ধরেন যাতে বলা হয়, শ্রম এবং মানবাধিকার উভয় ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মানবাধিকার বিষয়ে মূল ইবিএ কনভেনশনসমূহ মেনে চলার জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের ফলাফলের জন্য ইইউ’র নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা করা উচিত নয়, বরঞ্চ পূর্বেই স্পষ্টভাবে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ফিরিয়ে আনতে জন্য ইইউকে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে।

সূত্র : মানবজমিন