আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমনকি সংস্কারের জন্য ব্রিজটি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও আগের মতোই জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল করছে।
দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কারের অভাবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীনব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থাতেও ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করছিল যানবাহন। এতে ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। এমন বাস্তবতায় সুরমা নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা ক্বীনব্রিজ দুই মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্রিজ বন্ধ ঘোষণার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। এমনকি স্বাভাবিক রয়েছে যানবাহন ও মানুষজন চলাচল।
এদিকে, নির্দিষ্ট সময়ে ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়েছিল মেরামত কাজের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন ব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
পত্রে জানানো হয়েছিলো, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এ সেতুতে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং, স্টীল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকায় জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। সেজন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন ব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এসময় জনসাধরণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এর আগে গত ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কার কাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে এসএমপির সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন ‘ক্বীন ব্রিজ’ নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন অসম (বর্তমান আসাম) প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ করা হয় ‘ক্বীন ব্রিজ’। প্রায় শতবছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। নির্মাণের পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুটি। পরে ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর কিন ব্রিজে আর বড় ধরণের কোনো সংস্কার হয়নি।