বড় লক্ষ্য তাড়া করে সিলেটের টানা দ্বিতীয় জয়

শুরুতে শান্ত-হৃদয় আর শেষে মুশফিক-জাকির। দুইটা জুটি। নাহ শুধু জুটি নয় দুইটা ধ্বংসাত্মক জুটি। আর তাতেই ফরচুন বরিশালের দেওয়া ১৯৫ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য যেন হেসে-খেলেই এক ওভার বাকি থাকতে টপকে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। সাকিব আল হাসানের দলকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে আসরে টান দুই জয় তুলে নিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দিনের দ্বিতীয় খেলায় টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই সিলেটের বোলারদের ওপর তাণ্ডব শুরু করেন বরিশালের ব্যাটাররা। মাশরাফি বিন মুর্তজার করা ইনিংসের প্রথম ওভার থেকে দুই বরিশাল ওপেনার তুলে নেন ১৫ রান। প্রথম ছয় ওভার থেকেই বরিশালের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৪ রান। দুই ওপেনার মধ্যে এনামুক হক বিজয়ই বেশি আগ্রাসী ব্যাটিং করেন।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে বিজয়কে ফিরিয়ে সিলেটকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন মাশরাফি। মিড উইকেটে অ্যাকারম্যানের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে বিজয়ের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২৯ রানের ইনিংস। অন্যপাশে বিজয়ের যোগ সঙ্গ দেওয়া বরিশালের শ্রীলঙ্কান ওপেনার চতুরঙ্গা ডি সিলভাও বিদায় নেন পরের ওভারেই। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে এই লঙ্কানের ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস।

চার নম্বরে ব্যাটিং করতে এসে শুরু থেকেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ইনিংসের দশম ওভার করতে আসা অ্যাকারাম্যানের এক ওভারেই হাঁকান দুই ছক্কা। পরের ওভারেও সাকিবের ব্যাট থেকে আসে আরও দুই চার। তবে সাকিবের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সময় অন্যপাশে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বরিশালের পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইফতিখার আহমেদ। মাশরাফির করা ইনিংসের দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলে ৬ মারলেও পরের বলেই ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি।

তবে সাকিব তার আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন। যাকে সামনে পেয়েছেন তাকেই অনায়াসে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। পাঁচ নম্বরে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দ্রুত ফিরে গেলেও ব্যাট হাতে ঠিকই তাণ্ডব চালিয়ে গেছেন সাকিব। ১৬তম ওভারে এক চার ও এক ছক্কা হাঁকানোর পরের ওভারে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে আরও তিন চার, এক ছক্কা। ১৭তম ওভারে তো সিলেটের শ্রীলঙ্কান বোলার থিসার পেরেরাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন এই অলরাউন্ডার।

তবে ২৬তম বলে ফিফটি স্পর্শ করা সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারেননি বরিশালের পাকিস্তানি ব্যাটার হায়দার আলি। দলীয় ১৭১ রানে তিনি ফিরেছেন মাত্র তিন রানে। ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হতে পারতেন সাকিব। কিন্তু তার সহজ ক্যাচ মিস করেন সিলেট ফিল্ডার আকবর আলি। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি সাকিবের, ফিরেছেন মাশরাফির করা পরের ওভারের প্রথম বলেই। ফেরার আগে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ৩২ বলে ৬৭ রানের টর্নেডো ইনিংস। যেখানে তিনি মেরেছেন সাত চার ও চার ছক্কা। শেষদিকে করিম জান্নাতের ১৭ রানের ক্যামিওতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৯৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বরিশাল।

বড় রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বড় ধাক্কা খায় সিলেট। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রানআউট হয়ে ফিরে যান কলিন অ্যাকারম্যান। তবে এরপর শুরুর ধাক্কা মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌদিহ হৃদয়। দু’জনে মিলে বরিশালের বোলারদের তুলোধুনো শুরু করেন, যেন পাল্লা দিচ্ছিলেন কে কার থেকে বেশি বাউন্ডারি মারতে পারেন। তাদের এই অদৃশ্য পাল্লায় ভুক্তভোগি হয়েছেন বরিশালের বোলাররা।

শান্ত ও হৃদয়ের তাণ্ডবে পাওয়ার প্লেতে সিলেটের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৪ রান। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে যখন শান্ত রানআউট হয়ে ফেরেন, ততক্ষণে সিলেটের রান ১০০ পার হয়েছে। আর শান্তর নিজের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ৪০ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। একই সাথে ভাঙে ১০১ রানের জুটি।

শান্তর বিদায়ের পর চার নম্বরে ব্যাটিং করতে এসে শুরু থেকেই তাণ্ডব শুরু করেন জাকির হাসান। প্রথম ১১ বলেই তার ব্যাট থেকে সমান দুটি চার ও ছক্কায় আসে ২৭ রান। তবে শান্ত ফেরার পর বেশিক্ষণ টেকেননি হৃদয়। ব্যক্তিগত রানের ইনিংস ফিফটি পার করেই ফিরে যান তিনি। দলীয় ১৩৬ রানে যখন হৃদয় ফেরেন, তখন তার নামের পাশে লেখা হয়ে গেছে ৩৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস।

হৃদয় ফেরার পর জাকিরের সাথে যোগ দেন মুশফিকুর রহিম। তিনিও প্রথম বল থেকে পেটানো শুরু করেন। প্রথম ছয় বলেই তার ব্যাট থেকে আসে তিন চার ও এক ছক্কা। শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। তবে তিন ওভার প্রয়োজন হয়নি সিলেটের। ১৮তম ওভারে চতুরঙ্গার ওভার থেকে আট নেওয়ার পর ১৯তম ওভারে খালেদের বলে বাকি রান নিয়ে এক ওভার বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেন সিলেটের শ্রীলঙ্কান ব্যাটার থিসারা পেরারা। শেষ পর্যন্ত মুশফিক ১১ বলে ২৩ আর পেরেরা ৯ বলে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন।