মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় সংরক্ষিত বনে আগুন লাগার ঘটনায় বিট কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) প্রত্যাহার করেছে। তাকে বন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আগুনের এ ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি এখনও তদন্ত কাজ করছে।
আজ রোববার (১৯ মার্চ) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১ মার্চ পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের সমনভাগ বিটের মাখাল জোরা, আলমবাড়ী ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। বিষয়টি বিট কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে জানালে তিনি ৭ মার্চ আগুন নেভাতে যান।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বনায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষিত বনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের মদদে উপকারভোগীরা বনে আগুন দিয়েছেন। আগুনে বনের ছোট-বড় ১২টি টিলাসহ প্রায় ৪০ হেক্টর বনভূমির বাঁশ, গাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
তবে বন বিভাগ বলছে, কারও ফেলা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে বনের প্রায় এক দশমিক ৮৫ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে।
পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাধীন সমনভাগ বিটের সমনভাগ সংরক্ষিত বনের আয়তন এক হাজার ৮৫০ হেক্টর। সমনভাগ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিলে চিরসবুজ একটি বনাঞ্চল এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। আগুনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বনভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ। ধ্বংস হয়েছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বনে আগুন লাগার ঘটনায় ১১ দিন পর গত ১১ মার্চ বড়লেখা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বন বিভাগের সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আগুনে বনের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশগাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে। বনে থাকা কয়েকটি হাতি প্রাণের ভয়ে ভারতের দিকে পালিয়েছে। বন বিভাগের লোকজনকে জানানোর পরও তারা গুরুত্ব দেননি। শুরুতে গুরুত্ব দিলে এতো বন পুড়ত না।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, আমরা সমনভাগ বিটের মাখালজুড়া, আলামবাড়ী ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চল ঘুরে দেখেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৪০ হেক্টর এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে। একদিকে আগুনে বন পুড়ছে, অন্যদিকে কিছু লোক সেখান থেকে গাছ ও বাঁশ কেটে ফেলছে। আমরা জেনেছি যে বনায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে সংরক্ষিত বন পোড়ানো হয়েছে। এতে বন বিভাগের লোকজন জড়িত রয়েছেন।
বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, কেউ হয়তো সিগারেট টেনে অবশিষ্ট অংশ বনে ফেলেছেন। তা থেকে বনে আগুন লাগতে পারে। যেদিন বনে আগুন লেগেছে, ওই দিনই স্থানীয় বিট কর্মকর্তা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। পরদিন আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জিপিএস মেশিন দিয়ে পরিমাপ করে দেখেছি যে, আগুনে বনের এক দশমিক ৮৫ হেক্টর বনভূমি পুড়েছে। এতে ঝোপঝাড় ও গাছপালার পাতা ঝলসে গেছে।
এ ঘটনায় সমনভাগ বিট কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আগুনে পুড়ে গাছের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পোষাতে সেখানে গাছ লাগানো হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।