নানা চ্যালেঞ্জ ও বৈরি পরিবেশের মধ্যেও বরাবরের মতো এবারো বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছে দিতে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পুরোদমে কাজ চলছে। এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বই মুদ্রণের লক্ষ্যে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে টেন্ডার উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। এবার পাঠ্য পুস্তকের গুণগত মানের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরন করা হবে। আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া শেষ হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বই মুদ্রণের কাজ শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন।
সাধারণ স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বই মুদ্রণের ব্যবস্থা করে থাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনটিসিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘প্রতি বছরই জানুয়ারিতে নতুন বই দেওয়ার একটা রেওয়াজ রয়েছে। সেটার ভাল ও মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। কারণ,ওই ধরনের বাধ্যবাধকতার কারণে বইয়ের গুণগত মানের সাথে অনেক ক্ষেত্রে আপোষ করতে হতো। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেঁড়া বই, বইয়ের বাঁধাই ঠিক না থাকা, সেলাই খুলে যাওয়া, নিম্নমানের কাগজ ও ছাপা- এ ধরনের অভিযোগ আসতো। দেখা যেতো সে কারণে তাড়াহুড়ো করে বই বিতরণ করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে গুণগতমান ঠিক রাখা সম্ভব হতো না।’
তিনি আরো বলেন, এবারের চ্যালেঞ্জটা দু’দিক থেকেই। এক হলো-শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী বইয়ের পরিমার্জন করতে হচ্ছে। অপরটি হলো, বইয়ের গুণগতমান ঠিক রাখা।
বইয়ের গুণগতমানের ওপর গুরুত্বারোপ করে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে সবাই কাজ করছে উল্লেখ করে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকেই পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ তদারকি করতে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে প্রিন্ট অর্ডার দিয়েও জানুয়ারিতে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করেছি। সেক্ষেত্রে সবগুলো বই যে আমরা দিতে পেরেছিলাম, তা কিন্তু নয়, তবে মোটামুটি ওই মাসের মধ্যেই সব বই গেছে। এবারো আমরা চেষ্টা করবো শতভাগ না হলেও জানুয়ারির প্রথম দিকে ম্যাক্সিমাম বই দিয়ে দিতে। এটাই আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ। বইয়ের কাজ বিভিন্নভাবে হচ্ছে, প্রথম কথা হলো, বই টেন্ডার হয়। টেন্ডার একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। যারা টেন্ডার গ্রহণ করেন, তাদের যে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বই দেওয়ার কথা। সেটা না দিতে পারলে এর জন্য পেনাল্টি হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত টেন্ডার আমরা শিডিউল করেছি, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছে যাবে। টেন্ডারে যারা অংশ নিয়েছেন তারা সে সব শর্ত মেনেই কাজ করছেন।’
এদিকে, নতুন বই বিতরণ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিগতভাবে এবার বই উৎসবের আয়োজন করা হবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে সময় মতো বই তুলে দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাতিল করা হয় ২০২৩ সালের প্রণয়ন করা কারিকুলাম। চলতি বছরে সে শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করে ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ শিক্ষাক্রম অনুসারে আগামী শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। পরিমার্জন ও সংশোধন করা এসব পাঠ্য পুস্তক নিয়ে কাজ চলছে।