আবারও আলোচনায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়েও আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ সরকার বলে বিতর্কের জন্ম দেওয়া এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিঁড়ে অন্যদের ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত ৭ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৮/৯ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন থানা পুলিশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (১০ জুলাই) রাত ৯টায় পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেনের ঢালারপাড়স্থ অফিসে একই এলাকার মাসুক চৌধুরী ও রুপা মিয়ার ব্যবসায়ীক লেনদেন সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে সালিশ বিচারে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৩নং তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদু আলফু মিয়া এবং পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেনসহ স্থানীয়রা।
সালিশ বিচার চলাকালে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করলে চেয়ারম্যান আলফু মিয়া সবাইকে শান্ত থেকে সুন্দর পরিবেশে সালিশ বিচারে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অনুরোধ করে।
এসময় মুল্লুক হোসেন রূপা মিয়ার পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আলফু মিয়ার সাথে রাগান্বিত হতে শুরু করলে আলফু মিয়া সালিশ বিচার শেষ না করে চলে যাওয়ার সময় বলেন আমি এসব ঝামেলায় নাই আপনাদের যা ভালো মনে হয় তাই করুন।
তখন আওয়ামী লীগ নেতা মুল্লুক হোসেন, তার চাচাতো ভাই রুপা মিয়া, সফর মিয়া ও ছেলে বাবুল মিয়া, জামাল হোসেন, ভাতিজা জাহাঙ্গীর মিয়াও কবির হোসেন সহ অজ্ঞাতনামা ৮/৯ জন মিলিত হয়ে আলফু মিয়াকে বড় মামলায় ফাঁসাতে ঐ অফিসের মালামাল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দেন।
এসময় উপস্থিত উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীসহ কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ছিড়তে বাঁধা দিলে মুল্লুক হোসেন ও তাঁর বাহিনীর লোকেরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগকারী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, মুল্লুক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের এত বড় একজন নেতা হয়েও তিনি নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যকে ফাঁসাতে নিজেরাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিঁড়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
তিনিও আরও বলেন, মুল্লুক হোসেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা হয়েও স্বার্থের জন্য নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে সরকারকে অবৈধ বলেছে। এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও উনার আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে তিনি উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে দেখা গেছে। মুল্লুক হোসেনের এসব কর্মকান্ড আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে দাবী করে তিনি মুল্লুক হোসেনের পদ ত্যাগ দাবী করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মুল্লুক হোসেন বলেন, আলফু মিয়ার চেয়ারম্যান ৩ নৌকা মানুষ নিয়ে এসে আমার অফিসে ভাংচুর করেছে। এখন যারা আমার বিরুদ্ধে উল্টা অভিযোগ করছে তাঁরা আওয়ামী লীগের কেউ না এমনকি তাঁরা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে না। আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লোল রায় জানান, নিজেরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ছিড়ে অন্যদের ফাঁসানোর লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।