ফ্রান্স থেকে কফিনবন্দী হয়ে ফিরলেন বড়লেখার কাওছার

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আর পরিবারের অভাব ঘোচাতে প্রায় এক যুগ আগে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওছার হামিদ আলী (৩৫)। সাত বছর পর সেখান থেকে চলে যান ফ্রান্সে। এর মধ্যে পার হয়ে যায় এক যুগ, কাওছারের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।

কাওছারের স্বপ্ন ছিল প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। মা-বাবার দুঃখ ঘোচাবেন। পাতবেন নতুন সংসার। তাকে নিয়ে মা-বাবারও অনেক আশা ছিল। কিন্তু কারোরই সেই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। কেননা, কাওছারের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে চিরতরে। কাওছার দেশে ফিরেছেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে।

ফ্রান্সে খুন হওয়া কাওছার হামিদ আলীর মরদেহ সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজ বাড়িতে পৌঁছেছে। ফ্রান্সে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার তার মরদেহ বিমানে দেশের উদ্দেশে পাঠানো হয়। এর আগে ফ্রান্সের অভারভিলা বাংলাদেশি জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৩ অক্টোবর কাওছার ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কাওছারের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। শুরুতে কাওছারের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। কাওছারকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে প্রবাসী একটি সূত্র জানিয়েছে। কাওছারের স্বজন ও প্রবাসীরা এই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।

কাওছারের বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছেছে। প্রায় ১২ বছর আগে সে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে যায়। সেখান থেকে সাত বছর পর ফ্রান্সে পাড়ি জমায়। এক যুগ কেটে গেছে। সে আর দেশে আসেনি। আশা ছিল, দেশে এলে তাকে বিয়ে দেবো। কিন্তু তা তো আর হবে না কোনোদিন।

ফ্রান্স প্রবাসী কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে কাওছারের ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেওয়া হয়। এতে কাওছার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ অক্টোবর মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কাওছারের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, কাওছারকে মারধর করে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘাতকরা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে ফেসবুকে প্রচার করে।

ফ্রান্স প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ বলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শারহাদ শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা কাওছারের নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলাউড়ার লোকজন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন তিনি। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।