সিলেটের স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরোনো দালাল সিন্ডিকেট চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোগীদের জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ঔষধ। করা হচ্ছে নানা রকম হয়রানি।
সিলেটের স্বনামধন্য এই হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কিছু চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে রোগী এবং স্বজনরা। ডাক্তাররা নির্দিষ্ট ফার্মেসি থেকে দালালদের মাধ্যমে ঔষধ আনান, অন্যতায় ভাল চিকিৎসা হয় না। সেইসব নির্দিষ্ট ফার্মেসির নিন্মমানের ঔষধ অতিরিক্ত দামে কেনা ছাড়া উপায় নেই। একই সাথে দেওয়া হয় প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি ঔষধ। চিকিৎসা শেষে বাড়তি সেই ঔষধগুলোও রেখে দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে একই ফার্মেসিতে রাখা হয় অন্য কোন রোগীকে দেওয়ার জন্য।
২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যালের নতুন পরিচালক হিসেবে যোগদান করে আয়োজন করে চলা এসব দুর্নীতি আর অনিয়মের লাগাম টেনে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক পরিচালক ব্রিগিডিয়ার মাহবুব আলম। ভেঙে ফেলেন সিন্ডিকেট। এর ফলে চিকিৎসার বাড়তি খরচ এবং হয়রানি থেকে মুক্তি পান সাধারণ রোগীরা। কিন্তু গেল ৫ সেপ্টেম্বর পরিচালক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে আসেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির। ব্রিগেডিয়ার মাহবুব চলে যাবার পর থেকে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে ওসমানী মেডিক্যালের সেই পুরনো দালাল চক্রটি৷ রোগীদের জিম্মি করে আগের মতোই শুরু হয় দুর্নীতি আর অনিয়মের মহোৎসব।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা জাকারিয়া আহমেদ বলেন, আমার ছেলেটা হাত ভেঙে গেছে। এখানে নিয়ে আসার পর ডাক্তার দেখে ঔষধ লেখে বলবেন নিয়ে আসতে৷ আমি ডাক্তারের পাশ থেকে বের হতেই একজন অপরিচিত লোক আমার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে বললেন আমার সাথে আসুন। আমি বললাম আপনার সাথে কেন যাব? তখন লোকটি উত্তেজিত হয়ে বলল স্যার যে ফার্মেসির কথা বলেছেন সেটি আমাদের প্রতিষ্ঠান। এরপর কিছু না বলে তার সাথে সাথে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসি। ৩৬০০ টাকার ঔষধ ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমার পরিচিত একজন ফার্মাসিস্টকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, সর্বোচ্ছ ১৫০০ টাকার ঔষধ লাগার কথা। তাছাড়া দাম ও অন্যান্য জায়গার থেকে বেশি নিয়েছে। আর ব্যান্ডিস করার পর বাড়তি ঔষধ ও ফিরিয়ে দেয়নি। আমাদের মতো গরীব মানুষদের জিম্মি করে তারা এসব করে। কার কাছে অভিযোগ দেব, বলে আক্ষেপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
দালাল সিন্ডিকেটদের সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির এর সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হাসপাতালটির উপ-পরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করলে সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি ‘সিলেট ভয়েসকে’ বলেন, দালাল চক্রগুলোর সিন্ডিকেট ওসমানীতে এখন নেই বললেই চলে। আমরা এসবের বিরুদ্ধে বরাবরই কঠোর। তারপরও যদি আপনার কাছে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ বা তথ্য প্রমাণ থাকে লিখিত দেন ,আমরা সেই অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’