আগের বন্যার পানি নামার এখনও মাস পেরোয়নি। এরই মাঝে ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে সিলেট। ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অবস্থা সর্বশেষ বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে পানি ঢুকে পড়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কালিঘাট, মহাজনপট্টি, তালতলা, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাট পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এক মাস আগের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়ার আগে আরেক দফা বন্যায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কালিঘাটের ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাস টুকু।
এর আগে গত ১৫ মে থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। সেই সময়ে নগরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। সেই দুর্ভোগের রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গতের জন্য এরই মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ ২৯৮ মেট্রিকটন ডিআরএ-এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নগদ অর্থও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দুপুর ১২টা পর্যন্ত কানাইঘাটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারার পানি। এছাড়া সারিঘাট পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সকাল থেকে শুধু কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তাছাড়া বাকি সবকটি পয়েন্টে পানি অনেক বেড়েছে।
এমন বাস্তবতায় ভারত থেকে আসা উজানের ঢল ধলাই, পিয়াইন ও সারি নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ হওয়াতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
সিলেট ভয়েসের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি কবির আহমদ জানান, বিগত বন্যার পানি থেকে এবারের বন্যার পানি অন্তত ২ ফুট বেশি। যা বেড়েই চলছে। নিজের বসতভিটাসহ তার এলাকার হাজারো মানুষ বানের জলে আক্রান্ত। মানুষজন বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।
এদিকে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার পাশাপাশি জকিগঞ্জ ও সিলেট সদর এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তারমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে সবকটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় তলিয়ে গেছে সিলেট শহরের সাথে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। উপজেলার সদর, পূর্ব ও পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব ও পশ্চিম আলীর গাঁও, রুস্তমপুর, তোয়াকুল, লেংগুড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য আপাতত নেই। তবে বন্যার আগাম প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। ইতিমধ্যে জেলার সব উপজেলার জন্য ২৯৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
জেলার সবকয়টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলার সবকয়টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। যে কেউ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারবেন।
সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী জানান, গত তিনচারদিন সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও সময়ে এখন আর সিলেটে খুব বেশি বৃষ্টি হবে না। তবে উজানের দিকে প্রচুর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।