ফের বৃষ্টিতে জলমগ্ন সিলেট, সুখবর নেই আবহাওয়ার

নগরীর পাঠানটুলা এলাকা থেকে রবিবার ছবিটি তুলেছেন মিঠু দাস জয়

জলাবদ্ধতা যেনো পিছুই ছাড়ছেনা সিলেট মহানগরবাসীর। গত সপ্তাহ থেকে টানা বৃষ্টির কারণে মহানগরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। সড়ক তলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।

রবিবার (২ জুলাই) নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা যায়, টানা ভারী বর্ষণে নগরীর পাঠানটুলা, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, কামালগড়, তালতলা ও দাড়িয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার সড়ক তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় সড়কে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। কোথাও কোথাও সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে মানুষের বাসা-বাড়িতে। পানির সাথে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা ঢুকে বাড়িয়েছে দুর্ভোগ। পাঠানটুলা এলাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধান সড়কে কোমর পানি।

জলাবদ্ধতা নিয়ে কথা হয় নগরীর পাঠানটুলা এলাকার ব্যবসায়ী তারেক আহমদের সাথে। সাংবাদিক শুনেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তারেক। বলেন, আপনারাতো গত ৪/৫ বছর থেকেই আসছেন-যাচ্ছেন, কিন্তু তারপরও প্রতি বর্ষায় আমাদের সড়ক ডুবে যায়। একটু বৃষ্টি দিলেই হাঁটু পানি, বেশি হলে কোমর পানি। কতকিছু করা হলো তবুও সমাধান হলোনা। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নতুন করে ড্রেন বানালো, সড়ক ভবন থেকে নতুন করে রাস্তা উঁচু করে দিলো, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি।

এদিকে এরচেয়েও খারপ অবস্থা নগরীর তালতলা এলাকার। ভারী বর্ষণে প্রতিবছর কয়েকবার প্লাবিত হন এখানকার বাসিন্দারা। সিসিকের পক্ষ থেকে উন্নয়ন উন্নয়ন জিকির তোলা হলেও উন্নয়নের কোনো ফল ভোগ করতে পারেন নি এই এলাকার মানুষজন। ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে ভারী বর্ষণে কয়েকবার জলমগ্ন হয়েছে এই এলাকা। যদিও বৃষ্টি থামার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পানি নেমে যায়, তবে দুর্ভোগ কমে না। তালতলা এলাকার বাসিন্দা জিলু মিয়া বলেন, বন্যা হলেও আমাদের জলাবদ্ধতা থাকে, নাহলেও থাকে। বৃষ্টি শুরু হলেই আমরা আতঙ্কে থাকি এই বুঝি ঘরে পানি ঢুকলো। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে আজকে নিয়ে দুবার ঘরে পানি ঢুকেছে। কোনোভাবে আসবাবপত্র রক্ষা করেছি। কিন্তু ঘর ভর্তি ড্রেনের নোংরা ময়লা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই।

তবে বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত সিলেট সিটি করপোরেশন। সবসময়ের মতো একই বুলি আওড়ালেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে।

তবে সহসা বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ তা একই রকম থাকতে পারে। তাই আগামী প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, শনিকার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘন্টায় সিলেটজুড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। আর পরবর্তী ৯ ঘন্টায় প্রায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তবে অব্যাহত বৃষ্টিতেও সিলেটের প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।