আন্দোলনে শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকরা, ৭ দিনের আল্টিমেটাম

চা শ্রমিকদের ১৯ মাসের বকেয়া মজুরি, নতুন চুক্তি, সদস্য চাঁদার হিসাব, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির অপসারণ ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন সাধারণ চা শ্রমিকের ব্যানারে আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা।

আন্দোলনকারীরা বর্তমান চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম বেঁধে দেন। পরে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদল চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। সাধারণ চা শ্রমিকদের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল চা শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয় ঘেরাও করলে এসময় এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দিতে থাকেন এবং কার্যালয় প্রবেশের চেষ্টা চালান। এ সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা বর্তমান কমিটির সদস্যরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আন্দোলনরত চা শ্রমিকেরা জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর দীর্ঘসময় পেরুনোর পরও নির্বাচন না দেওয়ায় তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা তাদের আল্টিমেটাম দিয়েছি। ওই সময়ের মধ্যে বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সাধারণ চা শ্রমিকের ব্যানারে আন্দোলনকারী একাংশের নেতা রাজঘাট ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ বলেন, চা শ্রমিকেরা গত আগস্ট মাসে আন্দোলন করে তাদের মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা আদায় করেছিল। কিন্তু বর্তমান চা শ্রমিক ইউনিয়ন কমিটি মালিক পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে সেই টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচন না হওয়াও বর্তমান কমিটি স্বেচ্ছাচারীভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অনির্বাচিতরা চা শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্ব জোড় করে দখল নিয়ে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বার বার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু নির্বাচন তারা দিচ্ছেন না। আমরা আজ (রোববার) নির্বাচনের দাবিতে চা শ্রমিক ইউনিয়ন ঘেরাও করে আল্টিমেটাম দিয়েছি।

সেলিম আহমেদ বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যদি তারা (বর্তমান কমিটি) দায়িত্ব না ছাড়েন, যদি হিসাব না দেন, তাহলে আমরা সারা বাংলাদেশে চা বাগান বন্ধ রাখবো, আমাদের শ্রমিক চাঁদা বন্ধ থাকবে, আমরা এ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সবাই অবস্থান নিবো।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা আমাদের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের জন্য শ্রম অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সরকার থেকে আমাদের নির্বাচন আয়োজনের জন্য অর্থ বরাদ্দ না করায় নির্বাচন হয়নি। এখন আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সরকার এবং আমাদের যৌথ অর্থায়নে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি, বকেয়া মজুরির বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার পরপরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে সিলেট বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।