সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ব্যস্ততম এলাকা আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার জুড়ে চরমভাবে বেড়েছে হকারদের দৌড়াত্ম্য। নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শপথ গ্রহণের পর থেকে হকারদের কারণে হাঁটাচলাই দায় হয়ে পড়েছে। এতে যানজটের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন, তেমনি বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এদিকে বিগত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের কনফারেন্স হলে এক অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ‘আগামী একমাসের মধ্যে সিলেটের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করা হবে’ বলে ঘোষণা দিলেও মাস পূর্ণ হওয়ার পরও নগরকে হকারমুক্ত করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর সমালোচনার মুখ পড়ছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাছাড়া নগরীর ফুটপাত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে তার দায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপরও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
কোন উপায় না দেখে এবার ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজট নিরসনে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সিলেটের নগরীর ব্যবসায়ীরা।
পাশাপাশি পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে সিলেট নগরীর ফুটপাত-সড়ক দখল মুক্তকরণ, যানযট নিরসন ও জনসাধারণের চলাচলকে স্বাচ্ছন্দ্য করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি প্রতিবার রমজান মাস ও ঈদ আসলেই ভাসমান হকারদের দখলে চলে যায় ফুটপাত ও অধিকাংশ রাস্তা। যে কারণে ক্রেতাদের রাস্তা থেকে মার্কেট বা বিপনী বিতাণে যেতে দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। ক্ষতিগ্রস্থ হন লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগকারী স্থায়ী ব্যবসায়ীরা। এমন বাস্তবতায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা ফুটপাত-রাস্তা, দখল ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে ১৫ দিনের আলটিমেটাম প্রদান করেছেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় নগরীর বারুতখানাস্থ একটি অভিজাত হোটেলে সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ এবং ভুক্তভোগিদের এক সভায় এই আলটিমেটাম প্রদান করা হয়।
সভায় প্রদান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীদের কল্যাণে অত্যন্ত আন্তরিক। বৈশ্বিকক কারণে কিছু কিছু জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পবিত্র মাহে রমজানে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
তিনি সুখে-দুখে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ‘সিসিক মেয়রকে নিয়ে নগরীর যানজট, ফুটপাত ও রাজপথ দখল মুক্ত করতে তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’
সভায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেট নগরীতে যানজট সৃষ্টির যেসব কারণ আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে হাকারদের রাস্তা ও ফুটপাত দখল। এ ছাড়া নগরীর সরু রাস্তাগুলোতে গাড়ি পার্কিং করে রাখা। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তার বেশিরভাগ অংশও তাদের দখলে। ফলে এ রাস্তায় যানজট লেগেই আছে। পুরো বন্দরবাজার ও তার আশপাশ এলাকাজুড়ে রয়েছেন ভাসমান বিক্রেতারা। সাবেক মেয়র জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করেছিলেন। যার উপকারও পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমান মেয়র এক মাসের মধ্যে নগরীকে হকার ও যানযট মুক্ত ঘোষণা দিলেও তাঁর বাস্তবায়ন নগরবাসী এখনো প্রত্যক্ষ করেনি।
সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপনের যৌথ সভাপতিত্বে ও নিয়াজ আজিজুল করিম এবং আব্দুল মুনিম মুন্নার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর জব্বার জলিল, পরিচালক আবু হুরায়রা আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী এম এ মতিন, হাজী নওয়াব আলী ভেজিটেবল মার্কেট সমিতির সভাপতি হোসেন আহমদ, কালীঘাটের প্রবীন ব্যবসায়ী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম, মিরাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফুয়াজ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহীম, নয়াসড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, কুমারপাড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাহিদুর রহমান, হক সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ, ডাক বাংলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ জাহিদ উদ্দিন, মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. আব্দুল সাত্তার, কাজী ম্যানশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাহেল আহমদ, ফেডারেল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান, মধুবন সুপার মাকের্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদ, লালদিঘী হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ কবির আহমদ, করিম উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাভেল আহমদ, ব্লু-ওয়াটার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহেদ আহমদ, সিলেট মিলেনিয়াম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, আল মারজান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম, সমবায় ভবন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোয়েব আহমদ, হাসান মার্কেট বাহির লাইন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ময়না মিয়া, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতি মুফতি নেহাল উদ্দীন, শাহ আহমদুর রব, মো. লুৎফুর রহমান লিলু, মো. ছাদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আহাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আলেখ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পংকি মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লায়েক আহমদ, মো. রাজু আহমদ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. স্বপন প্রমুখ।