প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের মামলায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ তিন জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুনরায় তদন্তের আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ সৈয়দ কামাল হোসেনের আদালতে এ আবেদন করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম। আদালত এ বিষয়ে আংশিক শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ ফালুসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ১৩ মে দুদকের করা এই মামলায় তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ফালু ছাড়া অন্য দুজন আসামি হলেন আরএকে পেইন্টস লিমিটেডের পরিচালক বিএনপি নেতা এস এ কে ইকরামুজ্জামান এবং স্টার সিরামিকস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান। স্টার সিরামিকসের পরিচালক ও আরএকে কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক মো. আমির হোসাইন এজাহারে অসামি থাকলেও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে অভিযোপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্তরা ২০১০ সালে দুবাইয়ে আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, থ্রি স্টার লিমিটেড, ডেভেলপমেন্ট ইইউই নামে অফশোর কোম্পানি খোলেন। তারা বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাইয়ে পাচার করেন। তারা দুবাইয়ে ওই অর্থ উর্পাজনের কোনও উৎসও দেখাতে পারেননি। ওই অর্থ কীভাবে উর্পাজন করা হয়েছে তার কোনও তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই। দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে কখনও জানাননি বা কোনও ধরনের অনুমতি নেননি।
প্রকৃতপক্ষে, মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় দেশে অর্জিত অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে অফসোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। মামলার তদন্ত পর্যায়ে দুদকের আবেদনের পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ফালুর প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন আদালত।
দুদক জানিয়েছে, দুবাইয়ে ফালুর সম্পদের তথ্য জানতে এরই মধ্যে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। ওই তথ্য এলে তাও আলামত হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। সে সময় ঢাকার একটি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে খালেদা জিয়া তাকে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে আসেন। ২০১৬ সালে বিএনপির নতুন কমিটিতে ফালুকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান করা হলে তিনি পদত্যাগ করেন।
এরপর থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ফালু নিজের ব্যবসা নিয়েই আছেন। সিকিউরিটিজ, আবাসন, অ্যাগ্রো, আমদানি-রফতানি ব্যবসায় জড়িত এই ব্যবসায়ী এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি মামলা করেছে দুদক।