‘প্রেমের দ্বন্দ্বে’ খুন হয়েছে ওসমানীনগরের স্কুলছাত্রী

সিলেটের ওসমানীনগরে দিপা রানী সিংহ (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার কথিত প্রেমিক ইমনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার তাজপুর বাজারে স্কুল রোডে ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলকের নির্মাণাধীন একতলা ভবনের ছাদ থেকে দিপার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত দিপা কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার তলাগ্রামের পীযুষ চন্দ্র সিংহের মেয়ে ও তাজপুর মঙ্গলচন্ডি নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সে তার পরিবারের সাথে দীর্ঘ দুই বছর ধরে স্কুল রোডের দুলিয়ারবন্দ এলাকায় চেয়ারম্যান ঝলকের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের চতুর্থ তলায় বসবাস করে আসছিল।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতের খাবার খেয়ে পিতা পীযুষ চন্দ্র সিংহের সাথে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে দিপা। ভোর ৫টার দিকে পীযুষ সিংহ ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখেন মেয়ে পাশে নেই। তিনি আরও দেখেন, ঘরের সদর দরজা ও কলাপসিবল গেট খোলা এবং দিপার মা ও বড় ভাইয়ের মোবাইল ও ঘরের চাবি নির্দিষ্ট স্থানে নেই। তিনি টের পান পোশাক বদল করে নতুন জামা পরে দিপা কোথাও চলে গেছে। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর একই ভবনের পাশের একতলা নির্মাণাধীন একটি ভবনে দিপার রক্তাক্ত লাশ খুঁজে পায় তার পরিবার। পরিবারের লোকজন দিপাকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্যারাডাইস মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে ওসমানীনগর থানার পুলিশ খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সুররহাল শেষ করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন জানান, লাশের সুরহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সুরৎহালে দেখা গেছে নিহত দিপার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ও পিঠের কিছু অংশ থেঁতলানো।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, পিবিআই’র পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান, ক্রাইম সিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) আশরাফুজ্জামান, ডিবির ওসি ইকতিয়ার উদ্দিন, ওসমানীনগর থানার ওসি এস এম মাইন উদ্দিনসহ সিআইডি’র টিম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিপা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে তার কথিত প্রেমিক বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজারের প্রান্ত বস্ত্রালয়ের কর্মচারী ইমনের সাথে দেখা করত।

দিপার স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বেশিরভাগ দিনই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। চলতি মার্চ মাসে মাত্র একদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল দিপা।

নিহত দিপার মামী বিথিকা দে বলেন, গত এক সপ্তাহ পূর্বে দিপাদের বাসা থেকে আমার স্মার্ট ফোনটি খোয়া যায়। কে নিয়েছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) দিপা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর বালাগঞ্জ থেকে তাদের বাসায় আসার পূর্বে জানতে পারি দিপার ইমন নামের একটি ছেলের সাথে প্রেম রয়েছে। একাধিকবার দিপা বালাগঞ্জে গিয়ে ইমনের সাথে দেখা করেছে। এছাড়া বালাগঞ্জের আরেকটি ছেলেও না কি দিপাকে পছন্দ করে। এনিয়ে ইমন ও সেই ছেলেটির মধ্যে দিপাকে নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে।

নিহত দিপার মা শিল্পী রানী সিংহ বলেন, আমার জানামতে আমাদের কোনো শত্রু নেই। আজ দিপা মারা যাওয়ার পর জানতে পারি দিপার সাথে ইমন নামের একটি ছেলে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত সোমবার জানতে পারি আমাদের দিপা স্কুলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। কেন এমনটি হচ্ছে দিপার সাথে অনেক কথা বলেও কিছু জানতে পারিনি। সে স্বাভাবিক ছিল। আমার মেয়েকে কে বা কারা হত্যা করেছে এটা পরিষ্কার। আমি ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই।

ওসমানীনগর থানার ওসি এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইমনসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। আশা করি দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।