কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকার পরও সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা খায়ের চৌধুরী।
সোমবার (৩ জুন) ভোর রাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়ের চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ‘গুন্ডা-মার্কা নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে শেষ মুহুর্তে এসে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনের দুদিন পূর্বে তার এই নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা সহকারি রিটার্নিং কমকর্তা ও কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে ২ জুন গাছবাড়ী বাজারে পৃথক স্থানে নির্বাচনী জনসভা করেন কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী একেএম শামসুজ্জামান বাহার ও অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশ।
কিন্তু শামসুজ্জামান বাহারের জনসভার স্থলে খায়ের চৌধুরীও নির্বাচনী জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে খায়ের চৌধুরী কোন অনুমতি নেননি। অনুমতি ছাড়া নির্বাচনী সমাবেশ করার ঘোষণায় তিনি অনঢ় ছিলেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে খায়ের চৌধুরী তার বেশ কিছু সমর্থকদের নিয়ে গাছবাড়ী বাজারে মিছিল সহকারে প্রবেশ করতে চাইলে গাছবাড়ী বাজারের অদূরে আনারকলি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানা পুলিশ অন্য দুই প্রার্থীর জনসভা চলায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য খায়ের চৌধুরীকে গাছবাড়ী বাজারে প্রবেশ না করে অন্য স্থানে জনসভা করার কথা বলেন। এরপরও চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়ের চৌধুরী তার কয়েকশো সমর্থককে নিয়ে স্থানীয় বোরহান উদ্দিন বাজারে গিয়ে টেলিফোন প্রতীকের সমর্থনে জনসভা করেন।
পরবর্তীতে খায়ের চৌধুরী ভোর রাতে এক ভিডিও বার্তায় কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার এবং আরো অন্যদের উপর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন।
খায়ের চৌধুরী ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমার অনুমতি নেয়া জায়গায় পেশিশক্তি, আর সমগ্র প্রশাসনযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে গুন্ডামী মার্কা নির্বাচনের কোন ভবিষ্যত আমি দেখি না। যারা আমার নিশ্চিত জয় দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে লাশ ফেলার সকল আয়োজন করে রেখেছিলেন আমি তাদের ফাঁদে পা দেইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৮-২০ হাজার মানুষের জনস্রোত নিয়েও যেখানে প্রোগ্রাম করতে পারিনি সেখানে নির্বাচনের রেজাল্ট কি হবে তা পাগলেও বুঝে। আমি কানাইঘাটবাসীর কাছে বিচার দিয়ে ফাঁদে ফেলার এই নির্বাচন বর্জন করলাম। যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়ের চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানান, ‘এই বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। নির্বাচন বর্জন করেছি সঠিক। তবে নির্বাচন বর্জন করার বিষয়টি লিখিত ভাবে নির্বাচন কমিশন বা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করি না।’
প্রশাসন ও থানা পুলিশকে দোষারোপ করে নির্বাচন থেকে খায়ের চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ, প্রশাসন কোন প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে নয়। একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়ের চৌধুরী প্রশাসন বা থানা পুলিশের কোন অনুমতি না নিয়ে গাছবাড়ী বাজারে নির্বাচনী সভা করতে চাইলে প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় বাজারে তাকে জনসভা, মিছিল করতে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিষেধ করে, অন্যত্র জনসভা করার কথা বলেছেন। খায়ের চৌধুরী বা তার কোন সমর্থককে পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি।
এদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চেয়ারম্যান খায়ের চৌধুরী প্রশাসনকে দোষারোপ করে যেসব কথাবার্তা বলছেন তা সঠিক নয়। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। কেন তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেলেন তা তিনি নিজেই বলতে পারবেন।