‘প্রবাসীর সম্পদ দখলের চেষ্টা করছে স্বজনবেশী চক্র’

যুক্তরাজ্যে বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কুক্ষিগত করার পর এখন দেশের সম্পদ স্বজনবেশী একটি চক্র হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও নগরীর বাগবাড়ি নরসিংটিলার ১১২ নং খান ভিলার মালিক আরিজ খান। স্ত্রীকে হাত করে জাল দলিলে তার বাসার মালিকানা দাবি করে তারা বাসা দখল ও প্রাণে মারার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি। তাদের অব্যাহত হুমকির কারণে আরিজ খান চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন উল্লেখ করে সম্পদ রক্ষাসহ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।

শনিবার (১১ জুন) দুপুরে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরিজ খান এসব অভিযোগ ও দাবি জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে পরিবারের জন্য যা করেছি তা সবই মনে হচ্ছে বৃথা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাসকালে তার নিউপুট এলাকায় নিজস্ব বাড়ি ছাড়াও একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। গত ১০ বছর ধরে স্ত্রী আয়ফুন নেছা খানমের সাথে বনিবনা হচ্ছে না। ছাড়াছাড়ি না হলেও তারা আলাদা বাস করছেন। ৫ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ও একমাত্র মেয়ে তাদের মায়ের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের মদদ দিচ্ছেন বিয়াই এর ছেলে (পুতরা) নগরীর মিরাবাজারের উদ্দীপন ২৪/৫ চন্দনটুলার বাসিন্দা নজরুল হোসেন খান। তার সাথে নরসিংটিলার চান মিয়ার ছেলে মইনুলসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে সম্পদ দখল ও প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।

আরিজ খান জানান, তিনি ২০০৫ সালে বাগবাড়ির নরসিংটিলায় প্রায় ৫ শতক জায়গা ক্রয় করে ৭ তলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত ওই জায়গার দলিল নাম্বার নং-১৫১২৩/০৫। কয়েক বছর আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে তার অপেনহার্ট সার্জারি করা হয়। চার বার স্ট্রোকও করেন। অসুস্থতার সময় স্ত্রী আয়ফুন নেছা খানম চলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি হেবা দলিল সম্পাদন করিয়ে নেন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ আবার হেবা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে অর্ধেক জায়গার দলিল আবার ফিরিয়ে দেন। যার নং-২৩৮৩। কিন্তু এক বছর পর আবার সম্পূর্ণ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তাকে দাতা দেখিয়ে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্ত্রী বরাবর আরেক দলিল সম্পাদন দেখানো হয়েছে। যার দলিল নং-১২৬৩। এনআইডি কার্ডের পরিবর্তে পাসপোর্টের ফটোকপি ও জাল সাক্ষর করে ওই দলিল সম্পাদন করে জালিয়াত চক্র। অথচ তিনি কোনো দলিল সম্পাদন করেন নি বলে জানান।

লিখিত বক্তব্যে আরিজ খান আরও জানান, গত ২৫ মার্চ তার বাসায় উঠতে গেলে কিছু লোক নিয়ে বাঁধা দেন তার পুতরা নজরুল ও তার সহযোগী নরসিংটিলার মইনুল। এ নিয়ে ঝামেলা হলে ওইদিন স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান ও এলাকার লোকজনের সহায়তায় বাসায় অবস্থান করেন তিনি। পৃথক ঘটনায় ফৌজদারি আইনে কোতোয়ালি থানা ও যুগ্ম জজ আদালতে স্বত্ব মামলা করেছেন উল্লেখ করে আরিজ খান জানান, মামলার পর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। অব্যাহত হুমকির মুখে তিনি ১৭ মে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। স্ত্রী আয়ফুন নেছা খানম ও পুতরা নজরুল হোসেন খান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধেও থানায় পৃথক জিডি করেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ কোনো সত্যতা পায়নি।

থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ২৭ এপ্রিল ও আরেক কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম ১৬ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আরিজ খান তার সম্পদ রক্ষা ও চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নরসিংটিলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী, সহ-সভাপতি আশিক আহমদ, মইনুল হক চুনু মিয়া, কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মাসুক আহমদ শফিক, সদস্য আবু সুফিয়ান, কামরুজ্জামান দিপু প্রমুখ।