‘আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ চাচাতো ভাই-বোনদের অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ। পারিবারিক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা, হামলা, মামলার পাশাপাশি গণমাধ্যমে অপপ্রচার করে তারা আমাদের জীবন ছারখার করে ফেলছেন। সামাজিকভাবে আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন।’
সোমবার (১১ মার্চ) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কতোয়ালপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত মইন মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন খোকন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আমি এবং আমার ভাই তোফায়েল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকি। আমার পরিবারে আমার শয্যাশায়ী মা, আমার স্ত্রী ও সন্তান থাকেন। মাকে দেখাশোনার জন্য বোন আমাদের বাড়িতেই থাকেন। বিবাদীগণ সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই-বোন হন।
তিনি বলেন, আমি এবং বিবাদী সুমি সিদ্দিকা ও মারুফ গং এলাকার সালিশি বাটোয়ারার মাধ্যমে প্রায় ৩০ বৎসর থেকে আমাদের মৌরুসি সূত্রে পাওয়া জায়গা-জমি ভোগদখল করে আসছি। উক্ত ভোগদখলকৃত জায়গায় ওপর বিবাদীগণ নিজেদের বসতঘর নির্মাণ করেন আনুমানিক ২০০২ সালে। আর আমি আমার পাকা দালানঘর নির্মাণ করি ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। বিবাদীগণ নিজেদের হিস্যার কোনো অংশ রাস্তার জন্য না রেখে নির্দিষ্ট হিস্যার সম্পূর্ণ জায়গাজুড়ে বসতঘর নির্মাণ করেন এবং পাশের অংশ দাগের মোজাম্মেল হোসেনদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক থাকায় নিজেদের জায়গা রাস্তার জন্য না রেখে অন্যের রাস্তা ব্যবহার করতে শুরু করেন। সে সময় মুরব্বিগণ তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেদের জন্য রাস্তার জায়গা রাখা উচিত। কিন্তু তারা এটি সরাসরি প্রত্যাখান করেন।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের দিকে বিবাদীগণ পাশের মোজাম্মেল হোসেন গংদের সাথে বিরোধে জড়ান। বিরোধ সৃষ্টি হলে তারা রাস্তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে ১০ ফুট দেয়াল নির্মাণ করে দেন। এতে সুমী-মারুফদের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে মোজাম্মেল হোসেন গংদের কাছ থেকে রাস্তা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় তারা ফের আমাদের দ্বারস্থ হন। তাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় এলাকার মুরব্বিদের অনুরোধে আমরা তাদের চলাচলের রাস্তা দিতে সম্মত হই। আমাদের সাথে এ রকম একটা চুক্তিনামা হয় যে, বাড়ির উত্তর পাশে খালি জায়গা থাকায় সেখানে একপক্ষ এবং বাড়িতে একপক্ষ স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন। যাতে করে আমাদের সব সমস্যা সমাধান হয়। এই চুক্তির ফলে আমরা আমাদের ঘরের দক্ষিণ দিকের একটা অংশে ঘরের সেফটি ট্যাংকের উপর দিয়ে তাদের চলাচলের অনুমতি করে দেই। কিন্তু পরবর্তীতে তারা চুক্তি নাকচ করে দেয় এবং এই রাস্তাসহ আমার ঘর পর্যন্ত নিজেদের বলে দাবি করে।
দেলোয়ার হোসেন খোকন অভিযোগ করেন, এতটা ছাড় দেওয়ার পরও আমাদের প্রতিপক্ষ সুমী সিদ্দিকা ও তার ভাই মারুফ আহমদ আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। বিবাদীগণের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা নানাভাবে আমার পাকা দালানঘর ভেঙে রাস্তা বের করার প্রস্তাব দেন। আমি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে তারা বল প্রয়োগ করেন, ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা চালান। এতে কাজ না হওয়ায় ২০১৯ সালের দিকে আমাদের প্রাপ্ত হিস্যার একটা নির্দিষ্ট অংশ তারা জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের করে নেন। এ নিয়ে আমরা অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়ি। পরবর্তীতে নানা জটিলতা মোকাবিল করে ভুল কাগজটি ঠিক করি। এখানেই শেষ নয়, ২০২১ সালের দিকে বিবাদীগণ বিজ্ঞ আদালতে বাটোয়ারা মামলা (মামলা নং ২৩২/২১) দায়ের করেন, যা এখনো চলমান। কিন্তু মামলা শেষ হওয়ার আগেই তারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে নানা ফন্দি করছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ সুমী সিদ্দিকা গং এতকিছুর পর সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করেছেন। অথচ বিবাদীগণের অত্যাচারের বর্ণনা দিলে আপনারাও অবাক হবেন। একের পর এক তাদের অন্যায়-অত্যাচার চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ঘরের সামনের গাছ কেটে ফেলেছে, গাছে আগুন দিয়েছে, ঘরে হামলা করেছে, পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে, আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছে। এতে আমি এবং আমার পরিবার সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। সর্বশেষ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ উল্লেখ করে একটা মিথ্যা মামলা (মামলা নং-১২/২৪) দিয়ে তারা আমি এবং আমার দুই ভাগ্নেকে আসামি করেছে। তাদের পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রের এই মামলায় আমাকে কারাভোগও করতে হয়েছে। অন্যদিকে, সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এ অবস্থায় আমরা সমাজে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি। বিভিন্ন অনলাইন/অফলাইন পত্রিকায় ভুয়া খবর প্রচার হওয়ায় আমাদের সম্মানহানি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ফেব্রæয়ারি মাসে তারা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও অপপ্রচার চালিয়েছে। তাদের একক বক্তব্যের ভিত্তিতে ২৮/০২/২৪ তারিখে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে ‘বসতবাড়ির ভ‚মি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে বাটোয়ারা মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষ একই এলাকার মইন মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন খোকন তার সংঘবদ্ধ দল নিয়ে জোরপূর্বক সুমি সিদ্দিকার বসতঘরের সামনে পাকা ঘর নির্মাণ করে গৃহবন্দি করে রেখেছেন।’ অথচ, বিজ্ঞ আদলতে মামলা হয়েছে ২০২১ সালে। আর আমাদের ঘর নির্মাণ হয়েছে ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে।
দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। সুমী সিদ্দিকা ও তার দলবল আমাদের ক্ষতিসাধনে আরও কোনো ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিতে পারেন। আমরা জেল-জুলুমের শিকার হতে পারি। তাই আমি এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য যাচাই করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’