পূজায় মমতার অনুদানে ‘না’ বিজেপি নেতার

মমতা সরকারের ৬০ হাজার রুপি পুজো অনুদান নেবেন না! তা স্পষ্ট জানিয়ে ফ্লেক্স টানিয়েছেন কলকাতার সর্বত্র। তাদের কালো কাপড়ে মোড়া মণ্ডপে থাকবে পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহতদের শ্রদ্ধায় শহিদবেদি। মাইকে শাঁখ-ঢাক-সানাইয়ের বদলে বাজবে ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত সন্তানহারা মায়ের কান্না।

ইউনেসকোর হেরিটেজ আখ্যা পাওয়া কলকাতার দুর্গাপূজাকে এভাবেই এবার তুলে ধরতে চাইছে ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের শুরু করা কলকাতার কাঁকুড়গাছির গিরীশ বিদ্যারত্ন লেনের পুজো। কলকাতার থিম পুজোর ভিড়ে অভিনব এই প্রতিবাদী পুজো ইতিমধ্যেই নজর কাড়ছে রাজ্য প্রশাসন থেকে সাধারণের মধ্যে।

২০২০ সালে শ্রীশ্রী সরস্বতী ও কালীমাতা মন্দির পরিষদ নামে ক্লাব তৈরি করে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট-পরবর্তী হিংসায় রক্তাক্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। ভোট-পরবর্তী হিংসায় কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুন হন। রাজ্যজুড়ে দলীয় ৬০ কর্মীকে খুনের অভিযোগে শাসকদল তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছিল বিজেপি।

এদিকে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে ১৩০ দিন পর তার দেহাবশেষ হাতে পেয়েছিল পরিবার। এই মামলা এখনো বিচারাধিন কলকাতা হাইকোর্টে।

ভোট-পরবর্তী তার মৃত্যুর পর সেই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। এই পুজো রাজ্য সরকারের অনুদান নেয় না। এবার তা ফ্লেক্সে লিখে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্লেক্সে থিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মায়েদের কান্না রক্তাক্ত বাংলা’।

অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘ভোট-পরবর্তী মামলায় আমার ভাইসহ যেভাবে ৬০ জন বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মায়েরা আজ কাঁদছেন। পশ্চিমবঙ্গের মাটি রক্তে ভেসে গিয়েছে। সেই চিন্তাকে সামনে রেখেই আমাদের থিম ‘মায়েদের কান্না, রক্তাক্ত বাংলা’। পুজোর সময় প্রতিটি মণ্ডপে আলোর রোশনাই, ঢাক ও সানাই বাজবে। কিন্তু সেই সময় ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত ৬০ সন্তানের মায়েরা অন্ধকারে বসে কাঁদবেন। তাই আমাদের মায়ের মণ্ডপেও সেভাবে আলো থাকবে না। আসন্ন পঞ্চায়েত-লোকসভা নির্বাচন, সেখানেও এই খুনের হোলি খেলা হতে পারে। তাই আর যাতে এ ঘটনা না ঘটে, তাই মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠভাবে হয়। কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিমার পায়ের কাছে আছে একদিকে ধর্ষিতা বাংলার এক মা। অপরদিকে সন্ত্রাসে নিহত তার স্বামী। মায়ের হাতে তাদের অধঃমৃত সন্তান। যাকে মা বাঁচাতে চাইছেন। আমাদের মহিষাসুর রূপে আছে সেই নেতা যিনি গরুপাচারকারী। আমাদের এই থিম সত্য ঘটনা অবলম্বনে। মণ্ডপ হবে কালো কাপড়ের। থাকবে শহিদবেদি। কালো পতাকা। মণ্ডপের বাইরে আমরা টিভিতে দেখাব বাংলার সন্ত্রাসের চিত্র। মাইকে বাজবে সন্তানহারা মায়েদের কান্না। আরও একটি মণ্ডপ আমরা করছি, যেখানে মাকে পুজো করে প্রার্থনা করা হবে আর কোনও মায়ের কোল যেন খানি না হয়। আসন্ন পঞ্চায়েত-লোকসভায় আর কারও যেন এক ফোঁটাও রক্ত না ঝরে সেই প্রার্থনাও করা হবে মা দুর্গার কাছে।’

এবারে ২৭ সেপ্টেম্বর পুজোর উদ্বোধন হবে শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিজিৎ ও হিংসায় নিহতদের স্মরণ করে। উদ্বোধনে আসবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ দিলীপ ঘোষরা।

সন্ত্রাসের শিকার হয়ে শুধু অভিজিতের মৃত্যু হয়নি। তার পুজোকে বন্ধ করতে গত বছর ষষ্ঠীর দিন হামলা করা হয়েছিল মণ্ডপে। এমনটা জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘গত বছর ষষ্ঠীর দিন গভীর রাতে আচমকায় মোটরবাইকে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী লাঠি-রড নিয়ে এসে হামলা চালায়। মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করা হয়। মণ্ডপে রাখা চেয়ারটেবিল উল্টে দেয়। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরাই এ ঘটনা ঘটায়। আমরা এ নিয়ে কাঁকুড়গাছি থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলাম। তাই এ বছর আমরা সর্তক থাকছি।

প্রতিমাশিল্পী, ডেকরেটার, আলোকশিল্পীর নাম বলতে পারছি না। কারণ, তাদের যদি ভয় দেখানো হয়।’

অনুদান কেন নেবেন না? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বজিতের সাফ কথা, ‘তৃণমূল আমাদের ৬০ জন ভাইকে হত্যা করছে। ফলে ওই রক্তমাখা হাত থেকে টাকা নিতে আমরা পারব না।’