রাজধানীর পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। কিন্তু মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন পর্যন্ত আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়নি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলেই রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করে। বছর শেষে তা থাকে হতাশায় মোড়া। আসামিপক্ষের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই আপিল শুনানি হয় না।
এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার পূর্ণ হলো বিডিআরে বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর। ২০০৯ সালের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরকে (বর্তমানে বিজিবি) রক্তাক্ত করে বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। তাদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। দীর্ঘ ১৩ বছরেও আলোচিত এ ঘটনার বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়াকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করেছেন সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা। অন্যদিকে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা শেষ করে দেয় স্মরণ করিয়ে আইনজ্ঞরা দ্রুত পিলখানা হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছেন।
বিডিআরে বিদ্রোহের ৫৭টি মামলার বিচার বাহিনীর নিজস্ব আদালতে শেষ হয়। সেখানে ৬ হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর সাধারণ আদালতে শুরু হয় দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম। এর মধ্যে বিস্ম্ফোরক মামলার বিচার এখন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৬০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৮ জন খালাস পান। তবে তাঁরা একই সঙ্গে বিস্ম্ফোরক মামলার আসামি হওয়ায় কারাগারে রয়েছেন।
এরপর ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ আসামির মৃত্যুদে র রায় বহাল রাখেন। ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন, ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও খালাস দেন ৪৯ আসামিকে।
হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আসামিদের মধ্যে ২০৩ জনের পক্ষে ৪৭টি আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। হাইকোর্টের রায়ে খালাস এবং মৃত্যুদে র পরিবর্তে যাবজ্জীবন হয়েছে- এমন ৮৩ আসামির মৃত্যুদ চেয়ে ২৩টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের ৭১টি আপিল ও লিভ টু আপিল হলেও শুনানি শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বিস্ম্ফোরক মামলায় ৮৩৪ আসামির মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন, পলাতক ২০। মোট সাক্ষী ১ হাজার ২৬৪ জন। বর্তমানে মাসে দু’দিন এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে।
মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, করোনা মহামারির কারণে মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত ২৫৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। চলতি বছরেই বিচার শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, পিলখানায় বিডিআরে বিদ্রোহের ঘটনায় করা মামলার বয়স ১৪ বছরে দাঁড়িয়েছে, যা দুঃখজনক। সত্যি বলতে, রাষ্ট্রপক্ষ মামলা বিলম্বের জন্য নানা কৌশল করছে। তারা আসলে চায় না, নির্দোষ আসামিরা জেল থেকে বের হোক।
এদিকে, চলতি বছরই সর্বোচ্চ আদালতে পিলখানা হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আপিল শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও আপিলের সারসংক্ষেপ জমা করা হয়েছে। যদিও আসামি পক্ষ সারসংক্ষেপ দেয়নি। এরপরও সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই আপিল শুনানি শুরু হবে।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, এক মাসের মধ্যে তাঁরা সারসংক্ষেপ জমা দেবেন।