ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি গতকাল থেকেই ছিল বিপদসীমার উপরে। গতরাতে ভারতের মেঘালয় থেকেও নামে ব্যাপক ঢল।
প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানিবন্দী হয়েছেন অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ।
সিলেটের জৈন্তাপুর ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান সাজন গত রাত ১১টা ০৯ মিনিটে ফেসবুকে লেখেন ‘লাশ উদ্ধার অইমু হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না, হয়তো এইটা শেষ পোস্ট’।
তবে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের তৎপরতায় ভোররাতে উদ্ধার হন সাজিদুর রহমান সাজনের মতো আকস্মিক বন্যা পানিবন্দী হয়ে যাওয়া হাজারো মানুষ।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সহ এই চার উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। এতে ব্যহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সড়কে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার উপরে ও কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিগোয়াইন নদী ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতরাতে সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একইসময়ে জৈন্তাপুরের লালাখালে রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত চব্বিশ ঘন্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেটে বৃষ্টিপাত ও ভারতের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলেই সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, উপজেলার উচু এলাকা ছাড়া সব প্লাবিত, কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির চাল পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। রাতে প্রবল স্রোতে উদ্ধারাভিযান ভালোভাবে পরিচালনা করা না গেলেও ভোর ৪টা থেকেই পুরোদমে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলা ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দী হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক মানুষ পার্শ্ববর্তী উচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, ‘জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতিমধ্যে বৈঠক করেছে। দ্রুত উদ্ধারাভিযান চলছে। সেনাবাহিনীও ইতিমধ্যে রেকি করে গেছে, প্রয়োজনে তারাও উদ্ধারাভিযান ও ত্রাণ বিতরণে যোগ দিবে।‘