জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বড় সুযোগ যখন সামনে, তখন জোরেশোরে ধাক্কা খেলেন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সৈকত। সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় অদম্য এই তরুণ এখন আফসোস করছেন নিজের ভুলের জন্য। গগনচুম্বী অট্টালিকা, চোখ ধাঁধানো চাকচিক্যের শহরে এ ভুলের কোনও সমাধান নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে হাজার হাজার প্রবাসীর একজন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সৈকত। বিদেশে আসার সময় পাসপোর্টে নিজের নাম, বয়স গরমিলের তথ্যের কারণে বিপত্তিতে পড়েছেন তিনি।
সম্প্রতি আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষণ বিভাগে চাকরির সুযোগ আসে সাইফুল ইসলাম সৈকতের। কিন্তু নামের ভুলে তাকে হারাতে হয় সোনার হরিণ।
সাইফুল বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমিরাতের স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি আমাকে একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব বিভাগে চাকরির সুযোগের কথা বলেন। মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন। এই চাকরির জন্য ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে আর আরবি অথবা ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। আমার এই যোগ্যতা থাকায় আমি প্রস্তুতি নিই।’
২০১৯ সাল আরব আমিরাতে থাকা সাইফুল ইসলাম সুন্দরভাবেই সাক্ষাৎকারে নিয়োগকর্তার মুখোমুখি হয়ে নির্বাচিত হন। এবার চাকরিতে যোগদানের প্রস্তুতি, কিন্তু এখানে ঘটলো বিপত্তি। বাংলাদেশ থেকে এসএসসি পাসের সনদ এনে দিলেও তা গ্রহণ করছেন না আমিরাতের এই প্রতিষ্ঠান। সাইফুল ইসলাম যে সনদ জমা দিয়েছেন, সেখানে নাম লেখা মোহাম্মদ সাইফুল। আর তার আমিরাতে ব্যবহৃত পাসপোর্টে লেখা মোহাম্মদ সৈকত। দুই জায়গায় দুই রকমের তথ্য থাকায় দক্ষতা থাকলেও ভালো বেতনের চাকরিটি হারান সাইফুল।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে আসি। এখানে আসার এক মাস আগে পাসপোর্ট করি। তখন তার প্রকৃত বয়স ছিল ১৭ বছর। কিন্তু ভিসা পেতে হলে ন্যূনতম বয়স ২০ বছর লাগবে। এ জন্য বয়স ২২ বছর দেখিয়ে পাসপোর্ট করি। আর পাসপোর্ট পেতে নিজের ডাকনাম সৈকত ব্যবহার করে বয়স বাড়িয়ে জন্মনিবন্ধন করে নিই। মূলত আমার পুরো নাম মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সৈকত। আমার এসএসসি পাসের সার্টিফিকেটে আমার নাম আছে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। আর আমার জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টে ব্যবহার করি মোহাম্মদ সৈকত।’
আরব আমিরাতের গগনচুম্বী অট্টালিকার ভিড়ে শত শত মানুষ আসে নিজের ভাগ্য বদলাতে। প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে অনেকেই আরব আমিরাতে যাচ্ছেন কাজের সন্ধানে। সেখানে কাজ পেলেও হাতছাড়া হচ্ছেন পাসপোর্টে নিজের তথ্য ভুল দেওয়ার জন্য।
মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, ‘আমি যখন কাজের জন্য সার্টিফিকেট জমা দিলাম, তখন তারা বলেছে কার সার্টিফিকেট দিয়েছি। পাসপোর্টের নামের সঙ্গে তো কোনও মিল নাই। আমি দক্ষতা অর্জন করলেও এই ভুলের জন্য সার্টিফিকেট কাজে লাগাতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমিরাতে আসছি ভিজিট ভিসায়। তিন মাস পর ভিজিট ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন ইনভেস্টর ভিসা করে আমিরাতেই থেকে যাই। তিন বছর মেয়াদি এই ভিসা করতে খরচ হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রথম এসে ইলেকট্রিক্যালের কাজ করি। তারপর করোনা মহামারি এলো, সবকিছু স্থবির হয়ে গেলো। করোনার কারণে পাঁচ মাস কর্মহীন ছিলাম। এরপর হোটেল কাজ করতাম, সঙ্গে একটা পার্টটাইম কাজ করতাম।’
অনেকই একই ভুল করেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, ‘আমি একা না, এই ভুল অনেকেই করে। অনেকে অল্প বয়সে বিদেশ আসে। তখন বয়স বাড়িয়ে পাসপোর্ট করে। অন্যান্য সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিল রেখে পাসপোর্টে তথ্য দেওয়ার বিষয়টি গুরত্ব দেয় না। যে কারণে ভালো কোনো কাজের সুযোগ এলেও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। এখানে মোটামুটি ভালো একটা কাজ পেতে গেলে ন্যূনতম এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট থাকতে হয়। আমার সার্টিফিকেট থাকলেও পাসপোর্টে ভুলের কারণে কাজে লাগাতে পারছি না।’