পারাবত ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড : তিন কমিটির তদন্ত শুরু

সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণ এখনও জানতে পারেনি রেলওয়ে। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে পৃথকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। আজ রোববার (১২ জুন) সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চককবিরাজী দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, আগুন লাগার অনেক কারণ থাকতে পারে। সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে পাওয়ার কার বগিতে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যার ফলে ট্রেনের তিনটি বগি দ্রুত আগুনে পুড়ে যায়।

এদিকে, পারাবত এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডে তিনটি পুড়ে যাওয়া বগি কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান স্টেশন মাস্টার মো. মহিবুর রহমান।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তৌফিকুল আজিম রোববার বিকেলে জানান, ইতোমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. খায়রুল কবির বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাবে না।

কী কারণে আগুন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত না করে কীভাবে বলবো? একটু সময় লাগবে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, সবকিছু দেখতে হচ্ছে, বিভিন্ন মেজারমেন্ট নিতে হবে। ওই ট্রেনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে তথ্য-প্রমাণ নিতে হবে, সেটি তো মেকানিক্যাল বিষয়। কোন জায়গায় কী ছিল, কীভাবে হতে পারে, সবকিছু দেখার পর বলা যাবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হক বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের তদন্ত কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করি দু-একদিনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট সবার কথা বলে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো। তখন বলতে পারবো, কী কারণে আগুন লেগেছে।

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বাবু অজয় কুমার পোদ্দার বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পারাবত ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ উদঘাটনে আরও একটু সময় লাগবে। সম্পূর্ণ মেকানিক্যাল বিষয়। ত্রুটি কোথায় ছিল তদন্তের পর বলা যাবে।

আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মো. ইসমাইল বলেন, ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলাকায় আসার পর হুইস পাইপে সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে হুইস পাইপের মেরামত শেষে ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শমশেরনগর স্টেশন অতিক্রম করার পর ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। থামানোর পর দেখা যায়, চাকার মধ্যে আগুন ও পরে পাওয়ার কারের ভেতর তেলের ট্যাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডে তিনটি বগি পুড়ে যায়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরের চককবিরাজী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। ওই পথে প্রায় চার ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ট্রেনের ‘পাওয়ার কার’ বগিতে আগুন লাগে। ধীরে ধীরে তা অন্যান্য বগিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ট্রেন থামানো হলে হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে কয়েকজন সামান্য আহত হয়।