ইউক্রেন যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। তবে রাশিয়া আগ বাড়িয়ে তা ব্যবহার করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার মানবাধিকার কাউন্সিলের বার্ষিক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। পুতিনের এমন বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। বলেছে, যে কোনো মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখতে হবে।
ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে পুতিন আরও বলেন, আমরা পাগল হইনি। রাশিয়ার ওপর হামলা চালানো হলেই কেবল এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে পালটা জবাব দেওয়া হবে। তবে নয় মাস ধরে চলা এ যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া তার অধিকাংশ লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা বাড়ছে যে, রাশিয়া তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পেরে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, আমরা পাগল হইনি। পরমাণু অস্ত্র কী, এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।
তবে পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার হুমকি দিনদিন বাড়ছে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘এই হুমকির বিষয়টি আড়াল করে রাখাটা ভুল হবে। শত্রুর হামলার জবাব হিসাবেই কেবল আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করব। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, মস্কোর নীতি হলো তথাকথিত প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো। আমরা পরমাণু হামলার শিকার হলেই কেবল পালটা হামলা চালাব। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে পুতিন বলেন, ‘অন্য কোনো দেশে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা নেই। তবে তুরস্কসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নিড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা মনে করি, পরমাণু অস্ত্র নিয়ে এই আলগা আলোচনা একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন। শীতল যুদ্ধের সময় থেকে চীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও খোদ রাশিয়ার মতো পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলো একটি বিষয়ে একমত আর তা হলো-‘কোনো অবস্থাতেই পরমাণু যুদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না এবং সেরকম যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না।’ তিনি আরও বলেন, এটি বিপজ্জনক। এই বক্তব্য স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের মূল চেতনার পরিপন্থি।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, মস্কোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি কমেছে। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আপাতত একটা জিনিস বদলেছে। সেটি হলো, রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বন্ধ করেছে। এটা হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে।
: টাইম ম্যাগাজিনের ২০২২ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ (সেরা ব্যক্তিত্ব) মনোনীত হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনীয়দের অনুপ্রাণিত করে রাশিয়ান আক্রমণ সাহসের সঙ্গে প্রতিহত করার জন্যই বুধবার তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তিনি তার কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। রয়টার্স।
ম্যাগাজিনটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে যখন বৃষ্টির মতো রাশিয়ান বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছিল, জেলেনস্কি কিয়েভ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। কিয়েভে জনসমাবেশে অংশ নেন। এমনকি যুদ্ধের মধ্যেই তিনি দেশব্যাপী ভ্রমণ করেন। ৪৪ বছর বয়সি ইউক্রেন নেতার ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধকালীন নেতা হিসাবে জেলেনস্কি যে ভূমিকা রেখেছেন, তার অনুপ্রেরণা প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন রাতে টেলিভিশনে যুদ্ধের তথ্যসংবলিত বক্তব্য দেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট।