পানির অভাব ও দুর্ঘটনায় বিপন্ন লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণীরা

অব্যাহতভাবে বন উজাড়, অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ ও শ্যালো দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং অনাবৃষ্টিতে দিন দিন পানির স্তর নামছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। শুষ্ক মৌসুমে দ্রুতই খাল, নালা ও ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছে না বন্যপ্রাণী। তৃষ্ণা মেটাতে লোকালয়ে আসার সময় ট্রেন ও যানবাহনের নিচে পড়ে প্রায়ই প্রাণ হারাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী।

পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, জাতীয় এ উদ্যানে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির অনেক বন্যপ্রাণী রয়েছে। গত কয়েক দশকে মূল্যবান গাছ কাটা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপড়ে পড়ে বনে গাছের ঘনত্ব অনেক কমেছে। এতে একদিকে প্রাণীর আবাসস্থল বিলুপ্ত হয়েছে, আরেকদিকে প্রতিবেশের ওপর পড়ছে প্রভাব। কয়েক বছর ধরে বনাঞ্চলে আগের মতো বৃষ্টি হয় না। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় এখন শুস্ক মৌসুমে শুরু হতে না হতেই পাহাড়ি ছড়া ও নালা শুকিয়ে যাচ্ছে। অথচ দুই দশক আগেও শুস্ক মৌসুমে ছড়া, খাল ও জলাধারে পানি পাওয়া যেত। এতে বন্যপ্রাণীগুলো পড়ছে খাবার পানির সংকটে। পর্যাপ্ত পানি ও খাবারের জোগান না থাকায় প্রাণীগুলো লোকালয়ে আসতে গিয়ে নানাভাবে মৃত্যুমুখে পড়ছে।

লাউয়াছড়া বনের মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও শুস্ক মৌসুমে এখানকার ছড়া ও খালে পানি থাকত। এখন পানি শুকিয়ে যায়। এজন্য ছড়ার কিছু স্থানে ড্রেজিং করে পানি ধরে রাখতে সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রস্তাব করা হয়েছে।

লাউয়াছড়া বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বন্যপ্রাণীর খাবার পানি সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ছড়া শুকিয়ে গেলে বন্যপ্রাণীর খাবার পানির কিছুটা সংকট দেখা দেয়। শুধু বনের ডরমিটরি এলাকায় একটি জলাধারে পানি থাকে। অন্য জলাধারে পানি না পাওয়ায় বন্যপ্রাণীগুলো এই সময় কিছুটা সংকটে পড়ে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখনও ছড়াগুলোর কিছু কিছু স্থানে পানি রয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পানির জন্য জলাধার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বনে বৃষ্টি ও গাছ কমেছে আর জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। এ কারণে শুস্ক মৌসুমে উদ্যানের ভেতর পানির কিছুটা সংকট থাকে। তবে পানি না পেলেও গাছের পাতা চিবিয়ে প্রাণীরা কিছুটা চাহিদা পূরণ করতে পারে।