রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫ মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নিয়ে আসা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে পৌঁছার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান সেখানে আসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এসব তথ্য জানান।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, মেডিক্যাল বোর্ড আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছরের ৯ আগস্ট গুলশানের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে গত বছরের ২৬ অক্টোবর ট্রান্সজুগার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শন্ট (টিআইপিএস পদ্ধতি) নামে পরিচিত হেপাটিক পদ্ধতিতে তার অস্ত্রোপচার করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের চিকিৎসক হামিদ রব, ক্রিস্টোস জর্জিয়াডেস ও জেমস পি এ হ্যামিল্টন গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টিআইপিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন।
টিআইপিএস এমন একটি পদ্ধতি যা পোর্টাল শিরাগুলোকে নিম্ন চাপযুক্ত সংলগ্ন রক্তনালীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে একটি স্টেন্ট (টিউব) সন্নিবেশ করে। এটি রোগাক্রান্ত লিভারের মাধ্যমে প্রবাহিত রক্তের চাপ উপশম করে এবং রক্তপাত ও তরল ব্যাকআপ বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে। একটি টিআইপিএস পোর্টাল শিরার (পোর্টাল হাইপারটেনশন নামে পরিচিত) উচ্চ রক্তচাপকে উপশম করে, যা প্রায়শ লিভার সিরোসিসের বিন্যাসে ঘটে।
২০২১ সালের নভেম্বরে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারও তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে আবেদন করেছে। তবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে পুরান ঢাকার কারাগারে পাঠানো হয়। পরে একই বছর দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে একাধিকবার তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।