টানা ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সামরিক বাহিনীর এই আক্রমণে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি কার্যত বিপর্যস্ত হলেও পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা নিয়ে সাধ্যমতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভও।
অবশ্য যুদ্ধে পশ্চিমাদের সরাসরি জড়িয়ে পড়া না পড়া নিয়েও নানা জল্পনা হয়েছে। তবে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের কারণেই কেবল পশ্চিমারা যুদ্ধে নামছে না বলে দাবি করেছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।
তিনি বলেছেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগার এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য মস্কোর নিয়মগুলোই পশ্চিমকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা থেকে বিরত রাখার একমাত্র কারণ।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের পর দীর্ঘসময় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় এই মিত্র রোববার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ওই মন্তব্য করেন।
ওই নিবন্ধে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ আরও বলেছেন, মস্কো ইউক্রেনে তার যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না কিয়েভের ‘ঘৃণ্য, ফ্যাসিবাদী শাসন’ অপসারণ করা হয় এবং দেশটিকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র করা না হয়।
অবশ্য দিমিত্রি মেদভেদেভ নিয়মিত ভাবেই পশ্চিমাদের নিন্দা করে থাকেন এবং ইউক্রেনকে লাভবান করার জন্য পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভেঙে ফেলতে চায় বলেও দাবি করে থাকেন। রসসিস্কায়া গেজেটা পত্রিকায় সাড়ে চার হাজার শব্দের ওই নিবন্ধে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘পশ্চিমারা কি কিয়েভের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধসহ সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তুত?’
তার ভাষায়, ‘আজকের একমাত্র জিনিস যা আমাদের শত্রুদের (যুদ্ধ শুরু করা থেকে) থামিয়ে দেয় তা হলো- রাশিয়া তার রাষ্ট্রীয় নীতির মৌলিক বিষয়গুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে… পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ। এবং যদি সত্যিকারের হুমকি দেখা দেয়, তাহলে এই অস্ত্র তাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে।’
প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে রাশিয়ার নীতি হচ্ছে, যদি আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। দেশটির হাতে প্রায় ৬ হাজার ওয়ারহেড রয়েছে।
এছাড়া রোববার পৃথকভাবে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আলোচনায় বসতে অস্বীকার করছে।
এই মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন, পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া ‘পাগল হয়ে যায়নি’ এবং রাশিয়া তার নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক বলে মনে করে থাকে।
রোববার প্রকাশিত ওই নিবন্ধে মেভেদেভ বলছেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব একদিকে যতটা সম্ভব রাশিয়াকে অপমান, অপদস্থ, ভেঙে টুকরো এবং ধ্বংস করার জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এবং অন্যদিকে পারমাণবিক বিপর্যয় এড়ানোর আকাঙ্ক্ষা মনে রেখেও ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
তিনি বলেন, রাশিয়া যে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করছে তা না পেলে ‘বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে যেতে থাকবে। আমরা এটি প্রতিরোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
মেদভেদেভ আরও বলেন, রাশিয়া বছরের পর বছর এবং সম্ভবত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কের কথা ভুলে যেতে পারে এবং এর পরিবর্তে বাকি বিশ্বের সাথে সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিতে পারে।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয়ে থাকে দিমিত্রি মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেদভেদেভ রাশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।