পর্দা উঠল ঢাকা লিট ফেস্টের

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হলো দেশি বিদেশি কবি, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, লেখকদের মিলনমেলা ঢাকা লিট ফেস্ট ২০২৩। এবার ঢাকা লিট ফেস্টের দশম আয়োজন। মহামারির কারণে দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ ছিল এই উৎসব।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মনিপুরী, ক্লাসিক্যাল, রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় এবারের উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ঢাকা লিট ফেস্ট ২০২৩-এর উদ্বোধন করেন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা।

এসময় ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায ও আহসান আকবার উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজকরা জানান, এবারের চার দিনের এই আয়োজনে থাকবে কথোপকথনের একটি বৈচিত্র্যময় মিশ্রণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সেশন, শিশু ও তরুণদের জন্য আকর্ষণীয় আয়োজন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাট্য, সংগীত এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এবারের আয়োজন সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। আমি ধারণা করছি এই আয়োজনের মাধ্যমে এমন কিছু দেখবো যা আমি জীবনেও দেখিনি। আমি মনে করি এই আয়োজনের শুরুটা বেশ চমকপ্রদ ছিল।’

ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘এরকম একটা আয়োজনে এসে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি কিন্তু এক দিক দিয়ে বাংলাদেশি। আমার মায়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ এবং বাবার বাড়ি বিক্রমপুর। আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি। আমি সবসময় বাংলাদেশের কথা বলি। বাংলাদেশের ভাষা খুব চমৎকার। বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষা দিন দিন আমার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইতালির অভিবাসন ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। কীভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশি পাকিস্তানিরা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। পায়ে হেঁটে, জঙ্গলের মধ্যে থেকে, তাদের গল্পগুলো খুবই স্পর্শকাতর। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে আঞ্চলিক লিডার, জিডিপি বেশ ভালো। সুতরাং সেলিব্রেট করার অনেক কিছু আছে।’ এসময় তিনি বাংলায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘এই আয়োজনের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত ছিল। মহামারির কারণে এবার হয়তো একটু সম্পৃক্ততা কমেছে। আমি এই আয়োজনের সফলতা কামনা করছি।’

ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘মহামারিতে আমরা অনেক প্রিয়জন হারিয়েছি। আমি তাদের স্মরণ করি। আমি এই আয়োজনের জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন লেখক যেমন নিভৃতে লিখেন তেমনি একজন বিজ্ঞানী আইসলেশনে কাজ করেন। এখানে যারা উপস্থিত থেকে অংশ নিচ্ছেন তারা অনেক মূল্যবান। এখানে অনেক আলোচনা, বিতর্ক এবং সৃজনশীলতার স্ফুলিঙ্গ দেখা যাবে। কী হবে, কী ঘটবে আগে থেকে ধারণা করা খুব কঠিন। আমরা যখন জানি কিছু একটা হবে, তখন আলোচনা সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আশা করি এই নব স্ফুলিঙ্গ এখানে জেগে উঠবে। কীভাবে জানি না, তবে হবে অবশ্যই।’

ঢাকা লিট ফেস্টের প্রযোজক ও পরিচালক সাদাফ সায বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই আয়োজন হয়ে আসছে। বিগত বছরগুলোতে নানা চ্যালেঞ্জ এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় আজ আমরা এখানে। মহামারি আমাদের একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। মহামারি আমাদের শিখিয়েছে যে আমাদের একে অপরের কত প্রয়োজন। আজকে আমরা উৎসব পালন করছি এই জায়গায়। উন্মুক্ত মন আগামী চারদিন নানা আয়োজন উপভোগ করতে পারবে। আমাদের সঙ্গে বিশ্বের নামকরা লেখকরা অংশ নেওয়ায় আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে নতুন করে বাঁচতে হবে।’

ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবার বলেন, ‘আমরা জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কী , কিন্তু আমরা সেটি সাজাতে পারি। আগামী চারদিন ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজনে আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখব।’

ঢাকা লিট ফেস্টের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও সরাসরি টিকিটের লোকেশন জানতে লগইন করতে হবে www.dhakalitfest.com -এ। এবারের আয়োজনে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন হবে টিকিটের। ২০০ এবং ৫০০ টাকায় টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে এবং সশরীরে টিকিট কেনার সুযোগ থাকছে। এছাড়া বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশমুখে থাকছে স্পট রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা। ১২ বছরের কম বয়সী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন। অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেনার ব্যবস্থা রয়েছে।

পাশাপাশি কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় পাওয়া যাবে এগুলো। যেসব স্থানে টিকিট পাওয়া যাবে– ঢাকা লিট ফেস্ট অফিস (নিকেতন, ঢাকা), মীনা সুইটস (বনানী এক্সপেরিয়েন্স জোন এবং পান্থপথ শাখা), মীনা বাজার (ধানমন্ডি ২৭, উত্তরা আউটলেট, ইসিবি চত্বর আউটলেট, শান্তিনগর আউটলেট, বনশ্রী এবং মগবাজার আউটলেট), বাংলার মিষ্টি (বনানী ও গুলশান আউটলেট), আড়ং (মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা আউটলেট) এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। www.dhakalitfest.com লিংকে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এজন্য উল্লেখ করতে হবে দর্শনার্থীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, পেশা, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা। সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর টিকিট ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে।

ঢাকা লিট ফেস্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকা। তবে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট নিতে চাইলে ছাড় মিলবে ৫০০ টাকা, সেক্ষেত্রে একেক জন দর্শনার্থী ১৫০০ টাকায় চারদিনের টিকিট পেয়ে যাবেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুখবর। তারা প্রতিজন ২০০ টাকায় টিকিট কিনতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের বেলায় একসঙ্গে চার দিনের টিকিট কিনলে লাগবে ৫০০ টাকা, অর্থাৎ তাদের জন্য থাকছে ৩০০ টাকা ছাড়।