আমব্রেলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন পরিবেশের খাদ্য হিসেবে গাছ উপহার দিতে দ্বিতীয়বারের মতো ‘পরিবেশপ্রেমী অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রদান করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমব্রেলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী গাছ লাগানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে ‘পরিবেশপ্রেমী অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদানের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সফল সমাপ্তি হয়।
এবার দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা দুইজন ব্যক্তি ও একটি সংগঠনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সোশ্যাল ও ক্লাইমেট একটিভিস্ট এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, পরিবেশপ্রেমী অ্যাওয়ার্ড ২০২২ এর কি-নোট স্পিকার, জাতিসংঘের শিশু স্পিকার ও চাইলঅ্যান্ডডি এর ফাউন্ডার ফাতিহা আয়াত এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রাধিকারকে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গাছ লাগিয়ে আমব্রেলা কর্তৃক দেশসেরা পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হয়েছে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরার শরুব ইয়ুথ টিম, দ্বিতীয় হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা গার্ডেন লাভার্স সোসাইটি এবং তৃতীয় পুরস্কার লাভ করেছে রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁওয়ের অক্সিজেন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।
এছাড়া বিভাগীয় সেরা হিসেবে খুলনা বিভাগ থেকে অভয়ারণ্য, ঢাকা বিভাগ থেকে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন অথোরিটি (বেপা), চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ওয়ানম্যান আর্মি, রংপুর বিভাগ থেকে ব্রাইট হিউমেনিটি, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রাঙ্গামাটিয়া, সিলেট বিভাগ থেকে ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে স্বপ্নচূড়াকে ‘পরিবেশেপ্রেমী অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান করা হয় এবার।
এছাড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল সংগঠনকে ‘ফ্রেন্ড অব এনভায়রনমেন্ট’ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সকল সংগঠনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমব্রেলার উপদেষ্টা এবং ক্রাউন সিমেন্ট’র ডিস্ট্রিক্ট ইনচার্জ (সিলেট-সুনামগঞ্জ) ইকবাল হোসাইন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অপারেশন) এম এ জলিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আমব্রেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. বাদশা মিয়া।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আমব্রেলার উপদেষ্টা, হিউম্যানেটারিয়ান প্রফেশনাল এবং ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিল, কক্সবাজার, বাংলাদেশের টিম লিডার আতিক রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন। এটি একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না হলেও পরিবেশের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অপারেশন) এম এ জলিল বলেন, দেশের ৩০টি জেলার পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা আজ এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরিবেশ রক্ষায় একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক আশার কথা।
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম গাছ লাগানোর উৎকৃষ্ট সময়। তাই বর্ষা ঋতুকে উপলক্ষ করে আমব্রেলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছাসেবী পরিবার পরিবেশের খাদ্য হিসেবে গাছ উপহার দিতে প্রতিবছর মাসব্যাপী ‘পরিবেশপ্রেমী অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রজেক্ট শুরু করে। এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।
আমব্রেলার ফাউন্ডার ও সভাপতি মো. বাদশা মিয়া জানান, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় একটি বিষয় সকলের মনে দাগ কেটেছে যে, ‘মানুষ মানুষের জন্য’। এই ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন প্রান্তে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমব্রেলা পরিবারের স্বেচ্ছাসেবীরা। খাবার দেয়া থেকে শুরু করে ঘর-বাড়ি বানিয়ে দেয়া অব্যাহত রাখা হয়। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক বা সংগঠন আছেন সম্মুখভাগে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে আমরাও মানুষের সেবায় আমাদের কাজ অব্যাহত রেখেছি। তবে আমরা মানুষকে খাদ্য দেয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির খাদ্য হিসেবে আমাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশকে গাছ উপহার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এটি এখন একটি সফল ও বৃহৎ উদ্যোগ হিসেবে দেশব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে।