পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী, আজ মহানবীর আবির্ভাবের দিন

আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে।

দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারো নগরীতে বিশাল ‘জশনে জুলুছ ঈদ-এ মিলাদুন্নবী’ পালন করবে গাউসিয়া কমিটি সিলেট জেলা শাখা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মিছিলটি নগরীর হযরত শাহজালাল (র.) মাজার প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জালালাবাদ থানার মইয়ারচরস্থ মাদরাসা-এ-তৈয়বিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জুলুসোত্তর আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী, আজ মহানবীর আবির্ভাবের দিন

‘জশনে জুলুছ ঈদ-এ মিলাদুন্নবী’-তে নবীপ্রেমিক সবাইকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন মাদরাসা-এ-তৈয়বিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ জালালুদ্দিন আল-কাদরী।

এরপর নবীর শানে শোভাযাত্রাটি সিলেট নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া প্রাঙ্গণে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। এসময় সুললিত কন্ঠে মহানবীর শানে নাতে রাসুল ও ইসলামি সঙ্গিত পেশ করবেন শিল্পিরা।

ঈদ-এ মিলাদুন্নবী কি?

আল্লাহর অপার রহমত, রাহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবীজি হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মানবতার মুক্তির দূতের এ পৃথিবীতে শুভাগমনের আনন্দকেই ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ বলা হয়। যাঁর নূরের আলোয় সারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল। তাঁর ওপরই আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন আসমানি গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন।

তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের আলো হয়ে। হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরও জানাচ্ছি, আমি হাবিব আমার পিতা নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল এবং নবী হজরত ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ, আর আমার মাতা (আমিনার) স্বপ্ন।

নবীদের মাতারা এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতা তাঁকে প্রসবের সময় এমন এক নূর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল (তাবারানি, হাদিস নম্বর-১৫০৩৩, সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস নম্বর ৬৪০৪)।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের উৎসব আল কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সেই সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ (সুরা ইউনুস-৫৮)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে এখানে ফজল ও রহমত দ্বারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমন উদ্দেশ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালন করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সোমবার দিন রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (মুসলিম)।

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ ঈদ কীসের ঈদ? উত্তর এ ঈদ প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমন তথা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঈদ। প্রশ্ন হতে পারে, হাদিসে কি মিলাদুন্নবীর কথা আছে? জি, আমরা দেখতে পাই জামে তিরমিজি দ্বিতীয় খন্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে একটি অধ্যায়ই রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর দালায়েলুন নবুয়ত প্রথম খন্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় ফি মিলাদে রসুল্লল্লাহ (সা.) শীর্ষক একটি অধ্যায়ও রয়েছে।

নবীজির সাহাবিরাও মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজরত আমির আনসারি (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিলাদাত উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের ঘটনাগুলো শোনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিনে তাশরিফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে খুশি হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন (দুররুল মুনাজ্জাম)।