পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে ওই অঞ্চলে দেশি-দেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই। আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ না নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আপনারা দেখেছেন, আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী এবং অর্থনীতিবিদরা কীভাবে মনগড়া সমালোচনায় মেতে উঠেছিল।’
সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগত মানে কোনও আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।’
ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিহীনসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহায়তা, ভিটা উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কর্মমুখী ও আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
পরিবেশ রক্ষার জন্য পুনর্বাসিত এলাকাকে ‘পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বহুমুখী এই সেতুর ওপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।’
দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সহযোগিতার জন্যই আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
চলমান করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত গোটা বিশ্বকেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখী করেছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। খাদ্য শস্যের উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন ভাড়া। ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখতে। এই সময়ে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। অপচয় বন্ধ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ বছরই মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল উদ্বোধন করা হবে। ঢাকায় এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গৃহীত মেগাপ্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজও যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে।’